ঢাকা   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

১৩০ বছর বয়সেও জোটেনি আজিমনের বয়স্ক ভাতা কার্ড

গ্রামবাংলা

সোহেল রানা বাবু, মেহেরপুর

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

১৩০ বছর বয়সেও জোটেনি আজিমনের বয়স্ক ভাতা কার্ড

দুই নাতি-নাতনির মাঝে নিজ বসত ভিটায় বসে আছেন আজিমন নেছা।

প্রতিটি মানুষ সুন্দর জীবন জাপন করে বেচে থাকতে চাই, আর সেই জীবনে দীর্ঘায়ু হোক এটা কে না চাই। তবে আনুমানিক ১৩০ বছর বয়স্ক আজিমন নেছা বয়সের ভারে ন্যুব্জ, জরাজীর্ণ শরীর, আর পরনে থাকা ছেড়া কাপড়,শরীরে জড়ানো ছেঁড়া কাঁথা আর নোংরা মেঝেতে শুয়ে প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন মৃত্যুর। 

পরিবার ও প্রতিবেশিদের দাবি, তার বয়স আনুমানিক ১৩০ বছর পেরিয়েছে। আজিমন নেছার পিতা পিতল আলীকে হারিয়েছেন বিয়ের আগেই, আর বিয়ের কিছু বছর পরে হারিয়েছেন স্বামী মফেজ উদ্দিনকে, আর একমাএ সন্তান মইয়েজ উদ্দিন কে হারিয়েছেন বছর চল্লিশেক আগে, পিতা-মাতা, স্বামী,সন্তানকে হারিয়ে পরিবার বলতে ৬৯ বছর বয়সি নাতনি রত্না খাতুন ও ৬৭ বছর বয়সি আরে নাতি শাহবুদ্দিন আহমেদ। 

আর অভাবের সংসারে বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে পড়া রত্না খাতুন যখন নিজেই চলতে পারেন না অথচ তাকেই দেখাশোনা করতে হয় বৃদ্ধা আজিমন নেছাকে। অভাবের সংসারে আজিমন খাতুন এখন যেনো বোঝা ছাড়া আর কিছুই নই। অভাবের সংসারে এ বোঝা আর বইতে পারছে না বিধবা রত্না খাতুন। তাছাড়া সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া অন‍্যের বাড়ীতে কাজ করে দাদিকে নিয়ে জীবন জাপন করতে গিয়ে হাফিয়ে উঠেছেন। এখন তিনি একটু বিশ্রাম চান।

স্থানীয়রা বলেন, আজিমনের বয়স ১৩০ বছরের বেশি হলেও তার বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ না নেওয়া এবং খেয়ালীপনার কারণেই এমনটা হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে মেম্বারদের অনৈতিক সুবিধা দিতে না পারাই হইতো কার্ডটি হচ্ছে না। 

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল বলেন, আজিমন আমাদের এলাকায় কালো বুড়ি নামে পরিচিত। কালো বুড়িকে সেই ছোট বেলা থেকে দেখছি। ছোট বেলায় যেমন দেখেছি এখনো তেমনি দেখছি। এমনকি আমার বাবারাও তাকে এমটাই দেখছে। এই মানুষের কার্ডতো বাড়িতে বসে থেকে হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ আপনারা সাংবাদিকরা যদি এটা না তুলে ধরতেন হইতো সে অগচরেই থেকে সুবিধা বঞ্চিত হয়ে মৃত্যু বরণ করতন। এটাই সমাজের বাস্তব চিত্র।

আজিমন নেছার নাতী শাহাবুদ্দিন জানান, আমার বয়স ৬৯ বছরের বেশি। তিনি কখনোই তার দাদিকে সরকারি কোনো সাহায্য পেতে দেখেননি। তবে মেম্বররা ভোটের সময় এসে কার্ড ও সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে যান। ভোট পার হয়ে গেলে খোঁজ থাকে না।

কাজীপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফুলচাঁদ আলী বলেন, ‘শুরুতে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি এই সংবাদ শোনার পরে ওই বৃদ্ধার পরিবারের সাথে কথা বলে ইউনিয়ন পরিষদের ভাতার কার্ডের তালিকা দেখি। দেখতে পাই তালিকায় উনার নাম আছে এবং বিগত সময়ে দুবার টাকাও উঠেছে। তবে যে ফোন নম্বরটি ব‍্যাবহার করে টাকা উঠেছে সেই নম্বরটি এই পরিবারের কারোর না। আমি এই সপ্তাহের মধ‍্যে আজিমনের নাতি রত্নার ফোন নম্বরে যাতে ভাতার টাকা আসে সে ব‍্যাবস্থা করে দিবো।’

কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মু. আলম হোসেন বলেন, এত বয়স হওয়ার পরেও কেন তার বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি, তা দুঃখজনক। দ্রুত সময়ে তার কার্ড করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি, সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা তাকে দেওয়া হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন জানান, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তাকে সার্বিক সহযোগিতার জন‍্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। তাছাড়া আপাতত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বসবাসের ঘর মেরামতের জন‍্য ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ দেওয়া হবে।