
জয়পুরহাটের কালাইয়ে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কমেছে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া। এতে খুশি কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। হিমাগার থেকে আলু খালাস করার প্রথম দিকে ৬৫ কেজির প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার কর্তৃপক্ষ ভাড়া নিচ্ছিল ৪৩০-৪৫০ টাকা। সেখানে এখন বস্তা প্রতি আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার কর্তৃপক্ষ ভাড়া নিচ্ছে ৩৭০-৩৮০ টাকা।
এদিকে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের পাশে থাকায় ইউএনও শামিমা আক্তার জাহানকে কোর্ট করে পৌর শহরের শিমুলতলী এলাকায় অবস্থিত আর বি স্পেশালাইজড কোল্ড ষ্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার প্রসাদ বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ এসোসিয়েশন সভাপতি বরাবর কোল্ড ষ্টোরেজ ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে আবেদন দেন। সেখানে তিনি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে নির্ধারিত ৬.৭৫ টাকা কেজি প্রতি ভাড়া বহাল রেখে আলু খালাস করার কথা উল্লেখ করেন।
আবার এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর হিমাগারসমূহে সরকার কর্তৃক আলু সংরক্ষণের ভাড়া উপেক্ষা করে উপজেলা প্রশাসন থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া প্রসঙ্গে আবেদন করেছেন।
জানা যায়, জেলার ২১টি হিমাগারের মধ্যে ১৩টি হিমাগার অবস্থিত এ উপজেলায়। আবার আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। আর জেলার মধ্যে আলু উৎপাদনে প্রথম কালাই উপজেলা। এখানে আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় বিদেশে। তবে, এবার আলুর দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা। এতে তাদের প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে।
কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার উপজেলায় অতিরিক্ত উৎপাদন ও রপ্তানির হার কমে যাওয়ায় আলুর দাম ব্যাপকভাবে পড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭৪০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর ফলে প্রতি কেজি আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ২৭ টাকার বেশি পড়লেও বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা। এতে করে প্রতি বস্তায় গড় লোকসান দাঁড়াচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। এর থেকে উত্তোরণের দাবিতে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা আন্দোলন, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। কৃষি বান্ধব ইউএনও আমাদের সঙ্গে থাকায় হিমাগার সিন্ডিকেটের কবল থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি।
উপজেলার আঁওড়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য প্রথমে হিমাগার ভাড়া ৪৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছিল। ইউএনও স্যারের হস্তক্ষেপে এখন হিমাগারে বস্তা প্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৭০ টাকা। আলুর দাম কমে যাওয়ায় এমনিতেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আলু সংরক্ষণের ভাড়া কিছুটা কমে যাওয়ায় তারা খুশি।
আলু ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, এবার আলুর দাম কমে যাওয়ায় প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে। আবার হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল বেশি। হিমাগারে ভাড়া কমানোর দাবিতে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এমতাবস্থায় ইউএনও স্যারের হস্তক্ষেপে হিমাগারে ভাড়া কমানো হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও লোকসান কমছে।
কালাই পৌর শহরের সড়াইল এলাকায় অবস্থিত মেসার্স এম ইসরাত হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম বলেন, এখন হিমাগার থেকে আলু খালাসের মৌসুম চলছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬৫ কেজির প্রতি বস্তা ৩৭০ টাকা।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, হিমাগার কর্তৃপক্ষ মৌসুমের শুরুতে আলু খালাসের সময়ে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য বস্তা প্রতি ভাড়া নিচ্ছিল ৪৩০-৪৪০ টাকা। পরবর্তীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা আন্দোলন, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার আলোচনা শেষে তারা প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের ভাড়া ৩৭০ টাকা রাখার সম্মতি দিয়েছেন।