নতুন করে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চড়া সুদের প্রলোভনে আমানত সংগ্রহে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক। একীভূত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত এই ব্যাংকটি চলমান বাজারহারের চেয়ে গড়ে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি সুদ দেওয়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আগামী মার্চ থেকে নতুন সুদহার কার্যকর করে আমানত সংগ্রহ শুরু হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে আমানত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি ব্যাংক হিসেবে গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই নতুন ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। সে কারণেই উচ্চ সুদে নতুন আমানত সংগ্রহের আগে পুরনো ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, আইনি জটিলতার কারণে আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া বা অবসায়িত ঘোষণা না হলে আমানত বিমার আওতায় টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই। একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংককে দেউলিয়া ঘোষণা না করায় আইন সংশোধন ছাড়া সরাসরি অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ডিসেম্বরের মধ্যেই টাকা ফেরত কার্যক্রম শুরুর জন্য জোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র অনুযায়ী, যেকোনো মূল্যে সুদসহ সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ অর্থ তুলতে হলে গ্রাহকদের ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এর নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তবে টাকা ফেরতের প্রক্রিয়ায় কিছু কারিগরি চ্যালেঞ্জ রয়েছে—এর মধ্যে রয়েছে নতুন ডেটা সফটওয়্যার তৈরি, গ্রাহকের তথ্য যাচাই এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ বিতরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া জানান, আমানত বিমা তহবিলের অর্থ ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। এখন পুরনো গ্রাহকদের হিসাব একীভূত ও শাখাভিত্তিক যাচাই শেষ হলেই টাকা দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই গ্রাহকরা তাদের অর্থ পেতে শুরু করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পূর্ণাঙ্গ স্কিম তৈরি করছে, যা চূড়ান্ত হলে প্রকাশ করা হবে এবং সে অনুযায়ী টাকা বিতরণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, যাদের হিসাবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা রয়েছে তারা পুরো অর্থই তুলতে পারবেন। কারও হিসাবে এর বেশি থাকলে আপাতত দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে, বাকি অংশ পরবর্তী নীতিমালা অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হবে। একই ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা পাওয়া যাবে। তবে পাঁচটি ভিন্ন ব্যাংকে আলাদা হিসাব থাকলে প্রত্যেক ব্যাংক থেকেই সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা করে ফেরত পাওয়া যাবে। যেসব হিসাবে ঋণ রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ঋণ সমন্বয়ের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, একীভূত পাঁচ ব্যাংকের সব তথ্য নতুন ব্যাংকের ডাটাবেজে সংযুক্ত করা হচ্ছে এবং পুরনো সব গ্রাহক এখন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন। একই সঙ্গে নতুন ব্যাংকের আইটি ও মানবসম্পদ কাঠামো গড়ে তোলার কাজও এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, গ্রাহকরা যে ব্যাংকের ছিলেন, সেই ব্যাংক থেকেই টাকা পাবেন। এক ব্যাংকের গ্রাহককে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই। ডেটা স্থানান্তর শেষ হলে ধাপে ধাপে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হবে এবং কাউকে খালি হাতে ফেরত দেওয়া হবে না।
আরিফ হোসেন খান আরও জানান, সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়েছে এবং আমানত বিমার মাধ্যমেই টাকা পরিশোধ করা হবে। তবে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করে ধাপে ধাপে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে শাখাগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় ও বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায়।
গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে তিনি অনুরোধ জানান, যাদের প্রকৃত প্রয়োজন রয়েছে তারাই যেন টাকা তোলেন। অপ্রয়োজনে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে টাকা তুলে নিলে নতুন ব্যাংকের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংককে ঘুরে দাঁড় করাতে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গত ২ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে।
























