ঢাকা   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

নওগাঁবাসীর স্মরণীয় ৩৬দিন; জুলাই আন্দোলনে যেমন ছিল প্রেক্ষাপট

গ্রামবাংলা

নওগাঁ প্রতিনিধি : 

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১০ জুলাই ২০২৫

নওগাঁবাসীর স্মরণীয় ৩৬দিন; জুলাই আন্দোলনে যেমন ছিল প্রেক্ষাপট

৪ আগস্ট সকালে সড়ক অবরোধ করা হয় নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় থেকে এটিম মাঠ পর্যন্ত

২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল বছর। এই বছরটি ইতিহাসে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বছর হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ১৫ বছরের নৈরাজ্য হটানোর এটি ছিল চূড়ান্ত পর্ব। জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা বিরোধী আন্দোলন ধাপে ধাপে আগস্টে গিয়ে শেখ হাসিনার উৎখাতের একদফার আন্দোলনে পরিণত হয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এটি চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলন। কিন্তু না মূলত এটি বিগত ১৬ বছরের জমে থাকা ক্ষোভ, শোষণ-শাসনের ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর। একটি জেনারেশন যেভাবে দেশের ইতিহাস পাল্টে দিল তা অবিশ্বাস্য। মেধাভিত্তিক চাকরির দাবী গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়ে একটি ফ্যাসিবাদী সরকার ব্যবস্থার পতন হয়েছে আগষ্টের ৫তারিখে। তবে এই স্মরণীয় তারিখকে সবাই ৩৬জুলাইও বলে থাকেন। রাজধানী শহর ঢাকাই নয় দুর্বাল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশের প্রতিটি প্রান্তরে। আন্দোলনের ঢেউ আসে নওগাঁতে।

কেমন ছিল জুলাই-আগষ্টে সীমান্তের জেলা নওগাঁর প্রেক্ষাপট : 
গত ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ হয় ৫আগষ্ট। এ জেলার রাজপথ, শিক্ষাঙ্গন এবং সাধারণ মানুষের মাঝে গড়ে উঠেছিল তীব্র ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ। আর তা রুপ নেয় গণআন্দোলনে। দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শ্রমজীবী, নারী,পুরুষ এবং সাধারণ মানুষদের অংশগ্রহণে এই ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান হয়ে ওঠে সারাদেশব্যাপী প্রতিবাদের এক মহাচিত্র।

নওগাঁয় যেভাবে শুরু হয় আন্দোলনের সূত্রপাত : কোটা বিরোধী আন্দোলন যখন রাজধানী ঢাকা থেকে ধাপে ধাপে সারাদেশে বিস্তৃত্ব হয় তখন নওগাঁতে জাগ্রত হয় আন্দোলনের সূত্রাপাত। চাঁপা ক্ষোভ থেকে প্রতিরোধের সূচনা হয় নওগাঁতেও। সাধারণ মানুষ সরকারের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে পড়েন ধীরে ধীরে। হতে থাকে সংগবদ্ধ। জুলাই আন্দোলনে নওগাঁর শিক্ষার্থীরা প্রথম কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ৭ জুলাই ওইদিন সকাল ১০ টায় মুক্তির মোড় শহীদ মিনারে নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করতে চায়। কিন্তু  ছাত্রলীগের বাধায় সেদিনের কর্মসূচি পালন করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। এর পর বিকেলের দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শহরের মিছিল বের করা হয়। কিন্তু সেটাও পন্ড করে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই নওগাঁয় প্রবল আকার ধারণ করে আন্দোলন। এর পরের দিন প্রথম প্রাতিষ্টানিক আন্দোলন শুরু হয় নওগাঁ মেডিকেল কলেজে । শিক্ষার্থীরা সকালে মিছিল বের করলে তা পন্ড করে দেওয়া হয়। নওগাঁর বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই খন্ড-খন্ড মিছিল,প্রতিবাদ সভাসহ নানা কর্মসূচী করে ছাত্র-জনতা।  ১৬জুলাই বিকেলের দিকে শিক্ষার্থী প্রীতি আক্তার ও মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মিছিল শহরের মহলিা কলেজ গেট থেকে মিছিল বের হয়ে বাটার মোড় পৌঁছালে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীরা ব্যানার কেড়ে নিয়ে হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

আন্দোলনে বাঁধা, হামলা,হুমকিতেও পিছু হটেনি দাবি থেকে ছাত্র-জনতা: 
১৩থেকে ১৪জুলাই নওগাঁসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের চোখে সামনে থেকে দাবি তুলে ধরেছিল, যখন শেখ হাসিনার মন্তব্যের প্রতিবাদে তারা ‘রাজাকার’ শব্দটি পুনরায় ব্যবহার করছিল “সারা দেশের সাথে একযোগে নওগাঁ” স্লোগানটি আন্দোলনে প্রাণ সঞ্চার করে। ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি রিকশাচালক, হকার, দোকানদার, নারীরাও বিক্ষোভে যুক্ত হন। গড়ে তোলেন আরও তীব্র আন্দোলন। নওগাঁ শহর থেকে শুরু করে জেলার ১০উপজেলাতেও আন্দোল তীব্র আকার ধারন করে। শুরু ছাত্র-জনতার সাধে আওয়ামী লীগের ধাওয়া পাল্পা ধাওয়া। নানা ভাবে ছাত্র-জনতাকে হুমকি ধামকিও দেওয়া হয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে। দেখানো মামলার ভয়ভূতি। অনেক শিক্ষার্থী বাসা,মেস ও হোস্টেল ছেড়ে গোপন স্থানে আশ্রয় নেয়। আবার দিনের বেলা একত্রিত হয়ে মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। 
১৮জুলাই সকাল ১১টায় শহরের হাট নওগাঁ উচ্চবিদ্যালয়ন প্রাঙ্গনে জড়ো হয় বিপুল পরিমান শিক্ষার্থীরা। সাথে যোগ দেয় অবিভাবকরা। এর পর বেলা সাড়ে ১১টায় মিছিল বের হয়ে কাঁচা বাজার পার হয়ে রফিক টাওয়ারের কাছে পৌঁছালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় প্রতিক তাকবির নামে এক অবিভাবককে পিটিয়ে মারাত্বকভাবে আহত করা হয়। আন্দোলন হয় আরও গতিময়। এসব অত্যাচার ও নিপীরণ সহ্য করেও নওগাঁর রাজপথে ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে থেকেছেন ঢাল হয়ে। 

আগষ্টে নওগাঁর প্রেক্ষাপট যেমন ছিল:

পহেলা আগষ্ট নওগাঁর আন্দোলন আরও সংঘবদ্ধ হয়। প্রথমদিন কিছুটা আন্দোলন স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেলেও। সবাই নিরপাদ স্থান থেকে বিভিন্ন মাধমে সংঘবন্ধ হয়ে আন্দোলনকে গতিশীল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তার ফলসূরুপ ২আগষ্ট থেকে আন্দোলন রুপ নেয় আরও বড় আকারে।

সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এরমধ্যেই শুক্রবার (২আগস্ট) নওগাঁ শহরের সরিষা হাটির মোড়ে জেলা মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে নিহতদের স্বরণে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই মসজিদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী। সেখানে নেতৃত্ব দেয় শিক্ষার্থী আরমান হোসেন। তারা সারাদেশে শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে সড়কে গণমিছিল নিয়ে নামার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সামনেই শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে ঘরে ফিরে যেতে বলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হন তৎকালীন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফৌজিয়া হাবিব খাঁন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন এ দুই কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের গণমিছিল নিয়ে সড়কে না নামার অনুরোধ করেন। পরে সেই দিন আর বৃহৎ পরিসরে আর কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ২ আগস্ট প্রশাসন মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ ঘোষণা করে।

আন্দোলন চলাকালীন দেশব্যাপী যখন নির্বিচারে মানুষ হত্যা চলছিল তখন ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেখ হাসিনা সরকার ও তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারাদেশের ন্যায় ৩ আগস্ট একযোগে ১ দফার দাবিতে নওগাঁয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিছিলে জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় অফিস থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে ক্ষোভে আন্দোলনকারীরা দলীয় অফিসে হামলা চালায়। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের লাঠিচার্জে এক সাংবাদিকসহ ১৫ জন আহত হয়।  এরপর বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর ১২টার দিকে শহরের মুক্তির মোড়ে ফজলে রাব্বির নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা পুনরায় সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করে সরকার বিরোধীসহ নানা ধরণের স্লোগান দেয়। এসময় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে কর্মসূচী শেষ করে।

৪ আগস্ট সকালে সড়ক অবরোধ করা হয় কাজীর মোড় থেকে এটিম মাঠ পর্যন্ত। “জেগেছে রে, জেগেছে, ছাত্র-জনতা জেগেছে” এই স্লোগানে শহর উত্তাল হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের পদত্যাগ দাবি করেন। দিনব্যাপি চলে জেলা শহরসহ পুরো জেলার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন। আর এতে যোগ দেয় হাজার হাজার নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। উজ্জিবিত হয় শিক্ষার্থীরা।

৫ আগস্ট দিনটি বাঙ্গালী জাতির জন্য একটি অন্যরকম আবেগ ও অনুভূতির দিন। দিনটি ছিল নির্যাতিত জাতির জন্য আরেকটি মুক্তির দিন। সারাদেশে চলছিল কঠোর অবরোধ, নওগাঁতেও প্রতিবাদ থামেনি। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা কঠোরভাবে মাঠে ছিল। লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিং এবং স্বেচ্ছাসেবায় অংশ নিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পুরো জেলা বিশেষ করে নওগাঁ শহর মেইন সড়ক পুরোপুরি দখলে ছাত্র-জনতার। এরই মধ্যে বিকেলে খবর আছে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। পুশিল,সেনাবাহিনী,বিজিবিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সড়ে যায় । চোখে-মুখে বেদনা ও অন্যদিকে একরাশ প্রাপ্তি আর উল্লাসে মেতে ওঠে নওগাঁর ছাত্র -জনতা।

দীর্ঘ ৩৬দিনের আন্দোলনের স্মৃতিপট :
নওগাঁয় আন্দোলনের সংগঠক আরমান হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৩৬দিনের আন্দোলন এর পর আমরা মুক্তি পেয়েছি। এটা সহজ ছিলনা। অনেকের আত্নত্যাগের বিনিময়ে সম্ভব হয়েছে। “আমরা শুধু অধিকার চেয়েছিলাম, অথচ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের গায়ে হাত তুলেছিল। দেশ এগিয়ে যাক সামনের দিকে। সকল ধর্মের,সকল বর্ণের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করুক এটাই প্রত্যাশা। একটি সুন্দর ও শান্তিময় বাংলাদেশ চাই। সেটার জন্যই দীর্ঘ সংগ্রাম করেছিলাম আমরা। আশা করছি আগামীর বাংলাদেশ হবে একটি মডেল বাংলাদেশ।

ফজলে রাব্বি  নামের আরেক সংগঠক বলেন, অনেক ত্যাগ,শ্রম,ঘাম ঝড়ানো ও রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ পেয়েছি। সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে ঘা শিউরে ওঠে।“শুধু রাস্তায় দাঁড়ানো নয়, এটা ছিল বুকের ভেতর থেকে আসা প্রতিবাদ। ডিসি, পুলিশ সবাই আমাদের দমিয়ে রাখতে চেয়েছিল। নওগাঁর মানুষ সবচেয়ে বেশি জেগে ছিল। কেউ ভীত ছিল না, কেউ পিছু হটেনি। আমাদের সাথে হাজার- হাজার ছাত্র জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যোগ দিয়েছিল। কিছু নাম শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতে চাই-

তাদের মধ্যে,হাসিব,সাকিব,যুক্ত,রাফি,মেহেদী,আরমান,জোবায়ের,সাদিক,জরি,মিজান,তারিকুল, নাকিব,ফাইজা,মুন,মিলাদুন নবী, ঐশি, নিরব, রবিউল,তৌহিদ,তানজিম,ফরিদ,সাদ,তালহা,নাইম, শিথিল, আবরার রাকিন, পিয়াস ভাই,সাকিব ভাই, তাসলিমা ফেরদৌস, যুবদলের উজ্জল আংকেল, বেলাল আংকেল, মিলি আংকেল, আইনজীবী সাব্বির ভাই, জোবায়ের ভাই, জামায়াতের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের সোহাগ ও তাদের নেতা-কর্মীরা, শিবির ও ইসলামী আন্দোলন, কিছু পুলিশ সদস্য ও অনেক সাংবাদিক ভাইয়েরা। আমরা একটি পরিপাটি ও সুন্দর বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছি। যে বাংলাদেশ হবে একটি শোষণ মুক্ত,বঞ্চনা, দুর্নীতি মুক্ত উন্নত বাংলাদেশ।


আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবক রিজভী আহম্মেদ বলেন, “আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (নওগাঁ ব্লাড সার্কেল) পোস্টার ছাপিয়েছি, পত্রিকা বিলিয়েছি, রাতে নিঃশব্দে শহরে লিফলেট ছড়িয়েছি। কেউ নাম জানে না, কেউ চেনে না, তবু আমরা ছিলাম, আছি। আন্দোলন শুধু মিছিল নয়—আন্দোলন একটা মনোভাব। সেটা নওগাঁর প্রতিটি গলিতেই ছড়িয়ে গিয়েছিল।” এছাড়াও আমাদের সাথে  নওগাঁর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যুক্ত হয়ে আমরা এক যোগে কাজ করেছি। একটি জেলা, একটি চেতনার নাম নওগাঁ, নওগাঁ জেলার সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ছাত্র ইউনিয়ন,স্বেচ্ছাসেবী,  যুব ফোরামসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। নারী অংশগ্রহণ ছিল ব্যতিক্রমী।


ছাত্রদলনেতা শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, জুলাই-আগষ্ট আন্দোলনের সময় এমনও রাত গেছে বাড়ি ছেড়ে জঙ্গল,ধানক্ষেতসহ নানা স্থানে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। আমাকে হত্যারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সব হুমকি ও ভয়ভূতি মাথায় নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচির সাথে ছিলাম। সেসময়ের গোয়েন্দা বিভাগ,প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে নানাভাবে ভূমকি - ভয়ভীতি দেখানো হয়। সবকিছু মাথাই নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। 

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান একটি যুগান্তকারী গণপ্রতিরোধের নাম, যার অংশ হিসেবে নওগাঁ জেলার জনগণ সাহসিকতা ও ঐক্যের মাধ্যমে ইতিহাসে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে, যখন জনগণের অধিকার হরণ করা হয়, তখন তারা সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জানে।নওগাঁ যে ভূমিকা রেখেছে, তা নিঃসন্দেহে ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। জাতীয় সকল ইসুৎসহ নওগাঁর সকল সমস্যা ও সম্ভবনার ক্ষেত্রে আগামীতে এক কাতারে দাঁড়িয়ে রাখতে চান সম্মলিত ভূমিকা।