ঢাকা   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ঋণের ভারে জর্জরিত কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, জেনে নিন আর্থিক দুরবস্থা

কর্পোরেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৫২, ২৯ মার্চ ২০১৯

আপডেট: ২১:৪১, ২৯ মার্চ ২০১৯

ঋণের ভারে জর্জরিত কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, জেনে নিন আর্থিক দুরবস্থা

ঋণের ভারে জর্জরিত কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। আগামী ৩১ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির আইপিও আবেদন জমা নেওয়া শুরু হবে। যা চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত।

প্রতিষ্ঠানটির প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুঁজিবাজার থেকে তোলা টাকা থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবে কোম্পানিটি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ পরিশোধেই চলে যাবে উত্তোলিত অর্থের তিন ভাগের একভাগ।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে প্রতিষ্ঠানটির কী উদ্দেশ্যে বাজারে আসছে? এটা পরিস্কার তাদের ঋণের বোঝা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।

আইপিও প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে কপারেটক ইন্ডাস্ট্রিজ দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ২২৮ টাকা। যার সুদ হার ১২ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ। আর এ ঋণের চলতি অংশ ৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮০৭ টাকা আইপিওতে তোলা টাকা থেকে পরিশোধ করা হবে।

এর পরও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ঋণ দাঁড়াবে ২২ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২১ টাকা। ৫ বছর মেয়াদি এই ঋণ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানির ৬ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৮২৪ টাকা ঋণ রয়েছে।

এদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে স্বল্প মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ২৬ কোটি ১৪ লাখ ৭ হাজার ১০৪ টাকা।

আইপিও’র বাকি টাকা থেকে প্লান্ট ও যন্ত্রপাতি ক্রয় স্থাপন, ভবন ও সিভলি ওয়ার্কে খরচ হবে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আইপিও ফান্ড পাওয়ার ১২ মাসের মধ্যে প্রজেক্টের কাজ শেষ করা হবে। আর আইপিও বাবদ খরচ হিসাব করা হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

২০১৪ সালে উৎপাদনে আসা কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৭০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুনে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।

আইপিও পরবর্তী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন হবে ৬০ কোটি টাকা। কোম্পানির ৩০.০৭ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকের কাছে, ১৬.৬৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের কাছে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে থাকবে ৪৬.৬০ শতাংশ। বাকি শেয়ার মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বিদেশি (এনআরবি) বিনিয়োগকারীর কাছে।

কোম্পানিটির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্বাসী আদম আলী।

৩০ জুন, ২০১৮ সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষা হিসাবে, কোম্পানিটি ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৫৩ হাজার ২৪২ টাকার পণ্য বিক্রি করে কর পরিশোধের পর প্রকৃত মুনাফা করেছে ৪ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.০২ টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৮৮ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা হিসাব করে। এ সময়ে শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য(এনএভি) হয়েছে ১২.০৬ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ মূল্য দিয়ে বিচার করলে দুর্বলই বলা চলে।

২০১৪ সালে কোম্পানিটির লোকসান (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা। এর পরের বছর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি লাভ দেখাতে থাকে। ২০১৫ সালে ইপিএস ৫৯ পয়সা, ২০১৬ সালে ইপিএস বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে ৩ টাকা ১৬ পয়সা। অন্যদিকে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি লোকসান গুনে ৩২ লাখ ৮১ হাজার ৫৯৯ টাকা। আর ২০১৮ সালে অর্থাৎ আইপিওতে অর্থ তোলার অনুমতি চাওয়ার সময় কোম্পানিটির লোকসান তো দূরের কথা নিট মুনাফা ফুলে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার ৮৬৮ টাকা।

কোম্পানিটি মূলত কপার বার, স্ট্রিপ, ওয়্যার ও টিউব উৎপাদন করে। ৩০ জুন, ২০১৮ এ কোম্পানিটিরি মোট আয়ের ৩৮.৪৭ শতাংশ এসেছে কপার বার থেকে; ১৭.৭৭ শতাংশ এসেছে কপার স্ট্রিপ; ১৫.৬৬ শতাংশ এসেছে কপার ওয়্যার এবং ১১.৩৩ শতাংশ এসেছে কপার টিউব বিক্রি করে।

কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে এমটিভি ক্যাপিটাল লিমিটেড।

গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ এ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৬৭০তম সভায় কোম্পানিটিকে ১০ টাকা ইস্যু মূল্যের ২ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়।