২৫ নভেম্বর ২০১৬ শুক্রবার, ০৭:৪৭ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই গ্রামে কবিরাজির আড়ালে পর্নো ব্যবসা করে আসছে আকিল আহম্মেদ নামের এক ভণ্ড কবিরাজ। স্থানীয় এক ক্যাবল ব্যবসায়ীর সহায়তায় ভুক্তভোগীদের ভিডিও ধারণ করে তা দিয়েই ব্যবসা করতো একটি সিন্ডিকেট। এক স্কুলছাত্রীকে কবিরাজির মাধ্যমে তার সাবেক প্রেমিককে পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ধর্ষণ করে আকিল আহম্মেদ (৪৮) নামে ওই ভুয়া কবিরাজ। আর ধর্ষণের সেই ভিডিও ধারণ করে পরে তা প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে অসংখ্যবার ধর্ষণ করেছে ওই ছাত্রীকে। এদিকে ওই ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক ঘটনা দেখে ফেলায় তার প্রতিবেশী এক কিশোরীকে কৌশলে প্রলোভনে জড়িয়ে ধর্ষণ করে তারও ভিডিও ধারণ করে লম্পট আকিল। এরপর থেকে এক বছর যাবৎ ওই ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে দুই কিশোরীকেই শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল আকিল ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর এ তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে। এ রকম আরো অন্তত ৭-৮ জন কিশোরী যুবতীর সঙ্গেও এমন ঘটনার খবর এখন এলাকায় আলোচনার স্থান করে নিয়েছে। এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা না হলেও এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কবিরাজির নামে কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে বুধবার রাতে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আকিল আহম্মেদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করেছে। ঘটনার পর থেকে আকিল আহম্মেদ পলাতক রয়েছে। আকিল আহম্মেদ চান্দাই গ্রামের আবদুল বারী সরদার ঝুলনের ছেলে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, এক বছর আগে চান্দাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৫) কবিরাজির মাধ্যমে তার সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেয় আকিল আহম্মেদ। পরে তার কথামতো রাত ১১টার দিকে মেয়েটি তার বাড়িতে আসলে কবিরাজির ভান করে এক পর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় স্থানীয় ক্যাবল ব্যবসায়ী রঞ্জুসহ কয়েক সহযোগীর সহায়তায় ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে। পরে এ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গত এক বছর ধরে নিয়মিত মেয়েটিকে ধর্ষণ করে আসছিল সে।
কিছুদিন আগে বিকাল বেলা অপর মেয়েটি (১৩) ছাত্রীর সঙ্গে আকিলের শারীরিক মিলনে ব্যস্ত থাকার দৃশ্য দেখে ফেলে। বিষয়টি বুঝতে পেরে পরের দিন কৌশলে ওই মেয়েটিকেও আকিল আহম্মেদ তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখে। সম্প্রতি মেয়ে দুটি তার আহ্বানে সাড়া না দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়ে দুটিকে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ফুটেজটি এলাকার উঠতি যুবকদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া ইউটিউবেও ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। লোক লজ্জায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ তারা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আকিল ও রঞ্জুদের আরো অপকর্মের প্রমাণ মিলছে এলাকা জুড়ে। ওই দুই ছাত্রী ছাড়াও আরো ৭-৮ জন স্কুলছাত্রী কিশোরী যুবতীদের সঙ্গে এমন আচরণের কথা প্রকাশ পেয়েছে। জানা গেছে আকিল রঞ্জুসহ একটি চক্র প্রথমে কবিরাজি ও পরে গোপন ভিডিও ধারণ করে তার ফাঁদে ফেলে গ্রামের সহজ সরল মেয়েদের সর্বনাশ করতো। শুধু তাই নয় নানা ভাবে এসব ভিডিও ধারণ শেষে তার সিডি তৈরি করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতো। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর আকিল ও রঞ্জু পলাতক রয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের ব্যাপারে অনেকে মুখ খুলছেন না লোক লজ্জার ভয়ে। তবে জানা গেছে, ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা থানায় মামলা করবেন। এদিকে এ ঘটনার পর এলাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারা বুধবার রাতে আকিলের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করেছে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত করতে এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় চান্দাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইয়াহিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে তারা আর স্কুলে আসছে না। লোক মুখে এমন কথা শুনতে পাচ্ছি। এমন নিন্দনীয় কাজ যাতে পুনরায় না হয় সে ব্যাপারে সবার সজাগ থাকার কথাও বলেন তিনি।
চান্দাই ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানায়, এমন একটি ঘটনার কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহরিয়ার খান জানায়, বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনলেও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।