
বর্তমানে দেশে ব্যবসারত বহুজাতিক ৪১ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিতে চায় সরকার। তবে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। শেয়ারবাজারে এলে অনেক বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। এমন বাধ্যবাধকতায় জড়াতে চায় না কোম্পানিগুলো। এ কারণে পুঁজিবাজারে আসছে না।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দেশে ব্যবসা করে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে। এসব মুনাফার বড় একটি অংশ নগদ আকারে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না থাকায় তেমন সুফল পাচ্ছে না দেশের মানুষ।
দৈনিক আমাদের সময়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেয়ারবাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন ভালো কোম্পানির ঘাটতি রয়েছে। দেশে যেসব বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে এর সবই ভালোমানের কোম্পানি। প্রতিবছর মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে। অবশ্য বহুজাতিক কিছু কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সিঙ্গার, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, রেনাটা, বাটা, গ্রামীণফোন উল্লেখযোগ্য। এগুলো প্রতিবছর ভালো মুনাফা দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনতে প্রচলিত বিধিবিধান কিছুটা শিথিল করার সুপারিশ করেছে। শেয়ারবাজারে এলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের কিছু বিষয় মানতে হয়। এর মধ্যে প্রকাশ করতে হয় তদের হিসাব-নিকাশ। প্রতি তিন মাস পর পর কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের জানাতে হয়। এতে অনীহা রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের শেয়ার তিন বছরের লক-ইন থাকে। ইচ্ছা করলেও ওই সময়ে তারা শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না। মুনাফার একটি অংশ স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের দিতে হয়। এসব বিধিবিধান পরিপালনে তাদের অনীহা রয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বিদেশি উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন সহজকরণ, তালিকাভুক্তির আইনি বাধা দূর, ট্যাক্স হলিডে প্রদান এবং শুল্ক সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বলা হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিদেশি কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনা করতে সে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হয়। অথচ বাংলাদেশে এসব বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। এজন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করার পক্ষে মত দিয়েছে তারা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে ব্যাংকিং বিভাগের যুগ্ম সচিব নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ডিএসইর চেয়ারম্যান বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান, বিএসইসির প্রতিনিধি, সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনবিআর প্রতিনিধি, ইপিজেডের প্রতিনিধি ও অর্থ বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ডিএসইর চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া জানান, ঢাকার শেয়ারবাজারে ২৯৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১১টি বহুজাতিক, যা বাজার মূলধনের মাত্র ৭ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে প্রায় ৪১টি বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই ব্যবসা করছে। শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এজন্য আইনি যেসব বাধা রয়েছে তার দূর করা প্রয়োজন।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, বহুজাতিক কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় আইন করতে পারে। এ ছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। এজন্য সরকারি বেসরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
বিএসইসির প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আসা বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এসব কোম্পানির মুনাফা স্থানান্তরের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এনবিআরের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
ইপিজেড প্রতিনিধি জানান, বহুজাতিক কোম্পানিকে মোটিভেটের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে।
অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি জানান, ভারত ও পাকিস্তানে বহুজাতিক কোম্পানি যে হারে তালিকাভুক্তি হচ্ছে, সে হারে বাংলাদেশে হচ্ছে না। এর কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
জানা গেছে, বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ২০০৫ সালের ৩১ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি (এভেন্টিস লিমিটেড, অর্গানন বাংলাদেশ লিমিটেড, হোয়েকল্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন ডেভেলপমেন্ট, মিরপুর সিরামিক্সস ওয়ার্কস লিমিটেড, ইউনিলিভার বাংলাদেশ) তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বহুজাতিক কোম্পানির পর্ষদে থাকা সরকারি প্রতিনিধিদের বলা হয়, কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহ দিতে। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল সভায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়।
শেয়ার বিজনেস24.কম