দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি'র সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এক চরম বিপর্যয়কর সংবাদ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ আদেশে ব্যাংকটির ১ হাজার ৩৬ কোটি ২৮ লাখ ৪ হাজার ৪৮০ টাকার সম্পূর্ণ পরিশোধিত মূলধন ‘শূন্য’ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক রেজোলিউশন বিভাগ’ (বিআরডি) গত ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে ‘ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর ৩৩ ধারার আওতায় এই মূলধন হ্রাসকরণ আদেশ জারি করেছে। আদেশে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বাবদ থাকা সমুদয় অর্থ এখন থেকে বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে।
এই আদেশের ফলে ইউনিয়ন ব্যাংকের ইস্যু করা সকল শেয়ার এখন থেকে পুরোপুরি বাতিল বলে গণ্য হবে। এর ফলে ব্যাংকটির বর্তমান শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগ করা অর্থের বিপরীতে থাকা সমস্ত মালিকানা হারিয়েছেন। শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাধিকার, ডিভিডেন্ড প্রাপ্তির অধিকার এবং অন্য কোনো আইনি দাবি বা প্রতিকার পাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তটি গত ৫ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর বলে গণ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ, নভেম্বরের শুরু থেকেই আইনত ব্যাংকটির শেয়ারের কোনো আর্থিক অস্তিত্ব ছিল না। আদেশের ফলে এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে এবং শেয়ার বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার এখন কেবলই মূল্যহীন কাগজে পরিণত হয়েছে।
এই আদেশটির বৈধতার জন্য কোনো শেয়ারহোল্ডার, পাওনাদার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মতির প্রয়োজন পড়বে না। রেজোলিউশন অধ্যাদেশের ৩৩(২) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এই একক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও মালিকানা কাঠামোকে পুরোপুরি ভেঙে দিয়ে নতুন করে পুনর্গঠনের পথ তৈরি করা হলো।
ইউনিয়ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক বিবরণীসহ অভ্যন্তরীণ সকল নথিপত্রে মূলধন শূন্য করার এই পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ব্যাংকের বিধিবদ্ধ রেকর্ডগুলোতে এই পরিবর্তন আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মূলত বড় ধরনের আর্থিক সংকট বা অনিয়মে পড়া ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে এবং ব্যাংকিং সেবার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিশ্বজুড়ে এ ধরনের ‘রেজোলিউশন’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত একটি বড় ব্যাংকের সম্পূর্ণ শেয়ার এভাবে বাতিল হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও আস্থার সংকট তৈরি করেছে।
























