দীর্ঘ নয় বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস লিমিটেড (বিডি ওয়েল্ডিং) পুনরায় সচল হওয়ার পথে বড় ধরনের গতি পেয়েছে। নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজার উদ্যোগের খবরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ায় গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দরে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য উত্থান।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ার দর প্রায় ৯৬ শতাংশ বেড়ে ৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা কোম্পানিটি আবার উৎপাদনে ফিরতে পারে—এমন আশাবাদের কারণেই শেয়ার দরে এই চাঙ্গাভাব।
ডিএসইকে দেওয়া এক ব্যাখ্যায় গত ২৭ নভেম্বর বিডি ওয়েল্ডিং কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে, উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে নতুন বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চলছে। পরিচালনা পর্ষদের মতে, একজন শক্তিশালী ও সক্ষম বিনিয়োগকারী পাওয়া গেলে কারখানা পুনরায় চালু করা, শ্রমিক নিয়োগ এবং কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি ২০১৬ সাল থেকে পুরোপুরি উৎপাদনহীন অবস্থায় রয়েছে। চট্টগ্রামে অবস্থিত কারখানায় একাধিকবার বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে।
পরবর্তী সময়ে বিমা দাবি আদায়ে আইনি জটিলতা এবং ব্যাংক ঋণের দায় কোম্পানিটির সংকট আরও বাড়িয়ে তোলে। চট্টগ্রামের কারখানার জমি বিক্রি করে ব্যাংক দায় পরিশোধের পর ঢাকার ধামরাইয়ে নতুন জমি কেনা হলেও, পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে সেখানে শেড নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপন সম্ভব হয়নি। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে মাত্র দুইজন অফিস স্টাফ ছাড়া বাকি সব কর্মীকে বেতনহীন ছুটিতে রাখতে হয়।
এই অবস্থায় ২০২১ সালে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কোম্পানিটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসহ সম্পদ সুরক্ষায় হস্তক্ষেপ করে। পরবর্তীতে পর্ষদ পুনর্গঠন এবং বিভিন্ন বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের মাধ্যমে সম্পদ হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন হয়। বর্তমান পর্ষদের এই ‘টার্নঅ্যারাউন্ড’ উদ্যোগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হলে বিডি ওয়েল্ডিং তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে। একই সঙ্গে তালিকাভুক্তি ফি ও অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করে নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ফেরার বাস্তব সম্ভাবনাও তৈরি হবে বলে মনে করছেন তারা।
