দেশের অন্যতম শীর্ষ সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্রাউন সিমেন্ট পিএলসি–তে শুরু হয়েছে নেতৃত্বের নতুন অধ্যায়। উদ্যোক্তা পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের দুই সদস্যকে পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে কোম্পানিটি করপোরেট সুশাসন ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ এক ধাপ এগোল। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের ছেলে সোলায়মান কবির এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মোল্লাহর মেয়ে মুশরাত মহাজাবিন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
পর্ষদ অনুমোদিত এই নিয়োগগুলো আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আইনি শর্ত পূরণে উদ্যোক্তা পরিবারের শেয়ারহোল্ডিংয়েও পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত এপ্রিলে আলমগীর কবির তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ২৯.৭০ লাখ শেয়ার ছেলে সোলায়মান কবিরকে এবং মিজানুর রহমান মোল্লাহ ৩০ লাখ শেয়ার তার মেয়ে মুশরাত মহাজাবিনকে হস্তান্তর করেন।
শেয়ারবাজারের বিধি অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে হলে মোট শেয়ারের ন্যূনতম ২ শতাংশ বা ২৯.৭০ লাখ শেয়ার ধারণ করা বাধ্যতামূলক। ক্রাউন সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছে, নতুন প্রজন্মের এই পরিচালকরা করপোরেট কৌশল, টেকসই উন্নয়ন ও ডিজিটাল রূপান্তরে পর্ষদে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করবেন।
ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব আরও শক্ত করতে উদ্যোক্তা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও ধাপে ধাপে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের তালিকায় রয়েছেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে সালেহীন মুশফিক সাদাফ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোল্লাহ মোহাম্মদ মঞ্জুরের সন্তান আতিক মোর্শেদ ও মেহনাজ মেহজাবিন, এবং পরিচালক আলমাস শিমুলের ছেলে সাইহাম সাদিক পিয়াল। ইতোমধ্যে তাদের নামেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করা ক্রাউন সিমেন্ট ২০০০ সালে মাত্র ৬০০ টন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে কোম্পানিটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪০ টনে। তবে নেতৃত্বের এই রূপান্তরের সময়েই প্রতিষ্ঠানটি কিছু আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রাজস্ব ১৮ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা হলেও, উৎপাদন ব্যয়, ঋণের সুদ ও বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধির প্রভাবে নীট মুনাফা ৩৩ শতাংশ কমে ৬৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
তারপরও কোম্পানির মৌলভিত্তির ওপর আস্থা রেখে পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আশার কথা, ২০২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) ক্রাউন সিমেন্ট ঘুরে দাঁড়ানোর শক্ত ইঙ্গিত দিয়েছে—এই সময়ে রাজস্ব ২৫ শতাংশ এবং নীট মুনাফা ৭৭ শতাংশ বেড়ে ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, অভিজ্ঞ নেতৃত্বের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের এই সংযোজন ক্রাউন সিমেন্টকে দীর্ঘমেয়াদে আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দেবে।
























