শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে গুরুতর শঙ্কার কথা জানিয়েছে বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষক সংস্থা আশরাফ উদ্দিন অ্যান্ড কোং সতর্ক করে জানিয়েছে, কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে জরিমানা, লেনদেন সুবিধা স্থগিত কিংবা চরম ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাভুক্তি বাতিলের (ডিলিস্টিং) মতো কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে পারে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেন্ট্রাল ফার্মা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি ফি ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ফিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিধিবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রক ফি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থাকে ‘গোয়িং কনসার্ন’ হিসেবে ধরে নেওয়ার ক্ষেত্রে “বস্তুগত অনিশ্চয়তা” রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নিরীক্ষকরা।
নিরীক্ষকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে, যা প্রায় পরিশোধিত মূলধনের সমান। বর্তমান দায় পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় পরিচালন ক্যাশ ফ্লো তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যবস্থাপনা। পাশাপাশি ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন না করা, এনবিআর থেকে বড় অঙ্কের কর দাবি, সীমিত উৎপাদন সক্ষমতা এবং বিক্রয় ব্যয় টার্নওভারের চেয়েও বেশি হওয়ায় কোম্পানির কার্যক্রম আরও চাপে পড়েছে।
আর্থিক বিবরণীর স্বচ্ছতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন নিরীক্ষকরা। ঘোষিত সম্পদের মধ্যে ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার অগ্রিম আয়কর ব্যালেন্সের পক্ষে কোনো সহায়ক নথি উপস্থাপন করতে পারেনি কোম্পানি, ফলে এর সত্যতা যাচাই সম্ভব হয়নি। এছাড়া জনতা ব্যাংক থেকে নেওয়া তিনটি ঋণের অবস্থাও নিশ্চিত করা যায়নি। ২০২২ সালের জুন থেকে ঋণের ব্যালেন্স অপরিবর্তিত থাকলেও কিস্তি বা সুদের কোনো সংস্থান দেখানো হয়নি এবং নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ব্যাংকের ব্যালেন্স কনফার্মেশন অনুরোধেও সাড়া দেয়নি ব্যবস্থাপনা।
রাজস্ব ঘোষণার ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিরীক্ষা নোটে বলা হয়েছে, মাসিক ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করা হলেও বিক্রয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিক্রয় চালান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানি। সব বিক্রয় নগদে দেখানো হয়েছে এবং পণ্যভিত্তিক কোনো সমন্বয় না থাকায় আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান (আইএফআরএস) অনুযায়ী রাজস্বের নির্ভুলতা ও পূর্ণতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী স্পন্সর ও পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও সেন্ট্রাল ফার্মায় তা মাত্র ৭.৬৭ শতাংশে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই কোম্পানি ২০২০ অর্থবছরের পর থেকে আর কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব অনিয়ম ও আর্থিক দুর্বলতা দ্রুত সমাধান না হলে সেন্ট্রাল ফার্মার জন্য নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগজনক সংকেত।
























