মার্কিন অর্থনীতির দুর্বল পরিসংখ্যান ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার কমানোর সম্ভাবনা আরও জোরালো করেছে। আর এ প্রত্যাশার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। নিম্নমুখী প্রবণতা ভেঙে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার সূচকগুলো ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। একই স্রোতে যুক্ত হয়েছে এশিয়া–প্যাসিফিক অঞ্চলের শেয়ারবাজারও, যেখানে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সূচকে গতকাল বৃদ্ধি দেখা গেছে।—খবর রয়টার্স।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি ও অর্থনৈতিক ডেটার প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। এশিয়া–প্যাসিফিকের বাজার পরিস্থিতিও এর স্পষ্ট প্রমাণ।
জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক গতকাল বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। রফতানিনির্ভর ও প্রযুক্তিখাতের বড় কোম্পানির শেয়ারদর দ্রুত বাড়ায় এ উত্থান দেখা গেছে। তবে কিওক্সিয়া নামে দেশটির মেমোরি চিপ ও স্টোরেজ ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমেছে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। কারণ হিসেবে জানা গেছে—বেইন ক্যাপিটালের ২৩০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা।
ব্যাংক অব জাপান আগামী মাসে সুদহার বাড়াতে পারে—এমন সম্ভাবনায় ইয়েনের বিনিময় হার অস্থিতিশীল হয়েছে। অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নীতিতে থাকতে চাইছে। রাজনৈতিক দিক থেকেও পরিস্থিতি আলোচনায় আছে। প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির জনপ্রিয়তা বাড়ায় বিরোধী দলগুলো নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাপান ছাড়া এশিয়া-প্যাসিফিক বাজারকে প্রতিফলিত করা এমএসসিআই বিস্তৃত সূচকও গতকাল উল্লেখযোগ্যভাবে উত্থান দেখিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক উঠেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। সেখানে বাজারের সবচেয়ে বড় কোম্পানি স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের শেয়ারদর বেড়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এসকে হাইনিক্সের শেয়ারদরও বেড়েছে ১ শতাংশ।
হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক গতকাল বেড়েছে দশমিক ১ শতাংশ; তবে চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক কমেছে দশমিক ২ শতাংশ। আলিবাবার আয় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হলেও মুনাফা কমে যাওয়ায় কোম্পানিটির শেয়ারদর নেমেছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। তার আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও শেয়ারটি ২ দশমিক ৩ শতাংশ পড়ে যায়। তাইওয়ানের তাইএক্স সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
মার্কিন শেয়ারবাজারে টানা কয়েক মাস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহে সূচকগুলো পতনে গেলেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও নাসডাক কম্পোজিট সূচক টানা তৃতীয় দিনের মতো বেড়েছে। নতুন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম ছিল। এতে ফেডের দ্রুত সুদহার কমানোর আশা আরও বেড়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা—এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও একই পথে এগোতে পারে।
জ্যানাস হেন্ডারসন ইনভেস্টরসের পোর্টফোলিও ম্যানেজার সাট দুহরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কমলে উদীয়মান বাজারের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তখন এসব বাজারও নিজস্ব নীতির সুদহার কমাতে সক্রিয় হয়ে উঠবে।
ফেড ফান্ড ফিউচার তথ্য অনুযায়ী, ১০ ডিসেম্বরের এফওএমসি সভায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ৮০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে—যেখানে এক সপ্তাহ আগে এই সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৫০-৫০।
ওয়াল স্ট্রিটে মঙ্গলবার লেনদেন শেষে ডাও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং নাসডাক ০.৬৭ শতাংশ। থ্যাংকস গিভিং ডে উপলক্ষে মার্কিন শেয়ারবাজার আজ বন্ধ থাকবে এবং আগামীকাল সীমিত সময় লেনদেন হবে।
একইদিন পাউন্ডের বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ। বাজেট ঘোষণার আগে যুক্তরাজ্যে টানা পাঁচদিন ধরে মুদ্রার মূল্য বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাজেটে কর বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে—যা বাজেট ঘাটতি কমানো ও বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
ইউরোপে প্রারম্ভিক লেনদেনে গতকাল আঞ্চলিক ফিউচার সূচক বেড়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। পাশাপাশি জার্মানির ডিএএক্স ফিউচার ও এফটিএসই ফিউচার বেড়েছে যথাক্রমে দশমিক ৭ ও দশমিক ৩ শতাংশ।
ডলার সূচক, যা মার্কিন মুদ্রাকে অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করে, কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ৬৮৬-এ। নিউজিল্যান্ড ডলার শক্তিশালী হয়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। কারণ—নিউজিল্যান্ড রিজার্ভ ব্যাংক ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে সুদহার ২ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়েছে ও শিথিল নীতি কিছুটা সীমিত করেছে। একইদিন এসঅ্যান্ডপি/এনজেডএক্স৫০ সূচক বেড়েছে দশমিক ৬ শতাংশ।
অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স২০০ সূচক বেড়েছে দশমিক ৮ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ান ডলার বেড়েছে দশমিক ৬ শতাংশ। গত মাসে দেশটিতে ভোক্তা মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি থাকায় ধারণা জোরালো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর চক্র হয়তো শেষের দিকে।
























