দুর্বল আর্থিক অবস্থার কারণে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বিলুপ্তির পথে চলে আসায় শেয়ারবাজারে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে পাঁচটি দুর্বল শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের একীভূত হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকার ‘কাগজে থাকা সম্পদ’ হারিয়েছিলেন। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই এবার ৮টি তালিকাভুক্ত এনবিএফআই বিলুপ্তির আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত আগস্ট ঘোষণা করেন, মোট নয়টি এনবিএফআই’র আর্থিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের অযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ফাস ফিন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফিন্যান্স, প্রাইম ফিন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং—মোট আটটি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।
এই আটটি এনবিএফআই-এর সম্মিলিত পরিশোধিত মূলধন প্রায় ১,৪৫০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকার শেয়ার। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই সংস্থাগুলো বিলুপ্তি প্রক্রিয়ায় যায়, বিনিয়োগকারীরা সম্পূর্ণ অর্থ হারানোর ঝুঁকিতে থাকবেন। কারণ, বিলুপ্তির ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডাররা প্রাধান্য পান না; পাওনা পরিশোধ করা হয় কেবল কোম্পানির বিক্রয়যোগ্য সম্পদের ওপর ভিত্তি করে।
পরিস্থিতি আরও গুরুতর, কারণ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) চরমভাবে নেতিবাচক। অর্থাৎ, ঋণ ও দায় পরিশোধের পর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো অর্থ অবশিষ্ট থাকে না। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সংকট বহু বছর ধরে তৈরি হয়েছে; খেলাপি ঋণ এবং অর্থ পাচারের কারণে পুনর্গঠনের সুযোগ আর নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষে এনবিএফআই খাতে মোট ২৫,০৮৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ছিল, যার ৫২ শতাংশ দায় এই আটটি প্রতিষ্ঠান বহন করে।
বিএসইসি জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায়, বিলুপ্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে তারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে; তবে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার কোনো সুস্পষ্ট পথ নেই।
বিনিয়োগকারীরা এখন আতঙ্কিত, এবং বাজারে এই ৮ প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ধাক্কা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
























