
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বের শেয়ারবাজারের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স করেছে বাংলাদেশ। তিন মাসের ধারাবাহিক উত্থানের পর মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় ডিএসইএক্স ওই মাসে ৩.২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া ছিল মাসের সেরা পারফর্মার, যেখানে সেপ্টেম্বর মাসে শেয়ারবাজারে ১০ শতাংশেরও বেশি রিটার্ন হয়েছে। এর পরেই রয়েছে তাইওয়ান (৯ শতাংশ) এবং পাকিস্তান (৭.৩৪ শতাংশ)। ইবিএল সিকিউরিটিজ জানায়, বাংলাদেশের বাইরে কেবল ফিলিপাইন সামান্য ০.৩০ শতাংশ পতন দেখেছে; অন্য সব বাজার উর্ধ্বমুখী ছিল।
মাসের শুরুতে ডিএসই সূচক ১১ মাস পর প্রথমবার ৫,৬০০ পয়েন্ট অতিক্রম করলেও পরে বিক্রয়চাপের কারণে বাজারের গতি হারায়। ইবিএল সিকিউরিটিজ জানায়, “নতুন কোনো ইতিবাচক প্রণোদনা না থাকায় বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থান নেয়, ফলে বাজারে অস্থিরতা বাড়ে।”
সেপ্টেম্বর শেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭৯ পয়েন্ট কমে ৫,৪১৬ পয়েন্টে নেমে আসে। ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর ডিএস৩০ সূচক ১১১ পয়েন্ট কমে ২,০৮২ পয়েন্টে, এবং শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএস সূচক ৫৫ পয়েন্ট কমে ১,১৭২ পয়েন্টে পৌঁছায়।
বাজারে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী অপেক্ষার কৌশল গ্রহণ করেছে। আসন্ন আয়ের মৌসুমেও (আর্নিং সিজন) বিনিয়োগকারীরা নতুন পজিশন নিতে সতর্ক ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা আনতে নেওয়া কিছু নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপও বাজারে গতি কমিয়েছে।
ফলে সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক গড় লেনদেন আগের মাসের তুলনায় ৬.৩ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৮৭০ কোটি টাকায়। যদিও কিছু নির্বাচিত শেয়ারে ‘টার্গেটেড বাইং’-এর কারণে সামান্য উত্থান দেখা গেছে, তবে সামগ্রিকভাবে বিক্রয়চাপই বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে।
অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। রপ্তানি বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এ ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.৬৯ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সদ্য স্বাক্ষরিত শুল্ক-সহায়ক চুক্তি রপ্তানিতে গতি ধরে রাখতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, জাতীয় নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা কমেছে, যা অর্থনীতিতে আস্থা ফিরতে সাহায্য করবে।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশ হতে পারে, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীর কিন্তু স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়।
ইবিএল সিকিউরিটিজ সতর্ক করেছে, আসন্ন নির্বাচনী পর্যায়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা, ব্যাংক খাতের ঝুঁকি এবং বেসরকারি খাতের দুর্বল বিনিয়োগ প্রবণতা এখনো বাজারের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। তবে নীতিগত সুদের হার কমানো এবং সরকারি সিকিউরিটিজের ফলন হ্রাস পেলে, আগামী মাসগুলোতে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক গতি দেখা যেতে পারে।