ঢাকা   শনিবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

৫ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দুঃসংবাদ জানাল শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সর্বশেষ

৫ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দুঃসংবাদ জানাল শেয়ারবাজার

 দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত পাঁচটি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এই শেয়ারগুলোর বিপরীতে উদ্যোক্তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। কারণ, ব্যাংকগুলোর নিট সম্পদ এখন ঋণাত্মক (নেগেটিভ), ফলে শেয়ারগুলোর আর কোনো প্রকৃত মূল্য নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত ব্যাংকের নামে শতভাগ সরকারি মালিকানায় নতুন শেয়ার ইস্যু করবে। এর আওতায় গঠিত হবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ এবং নিয়োগ দেওয়া হবে একজন নতুন সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা)।


বর্তমান পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ, দায়দেনা এবং শাখাগুলো নবগঠিত ব্যাংকের অধীনে চলে আসবে।

একীভূতকরণের আওতায় আসা পাঁচটি ব্যাংক হলো:

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এসআইবিএল)

ইউনিয়ন ব্যাংক

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

এক্সিম ব্যাংক

এসব ব্যাংকের মালিকানায় এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এবং অভিযোগ রয়েছে—তাদের মাধ্যমে এসব ব্যাংকে বিপুল অর্থ লুটপাট এবং পাচার হয়েছে।

মূলধন সরবরাহ ও পুনর্গঠনের রূপরেখা

নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে:

২০ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করবে সরকার

১২ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানত বিমা তহবিল থেকে

৩ হাজার কোটি টাকা আসবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে

বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে মূলধন দেবে না, তবে প্রয়োজনে ঋণ সহায়তা ও নীতি সহায়তা দেবে।


পাঁচ ব্যাংকের প্রায় ৭৬০টি শাখা ও ৬৯৮টি উপশাখা রয়েছে। একীভূত ব্যাংকের শাখাগুলো পুনর্বিন্যাস করা হবে। একই উপজেলায় একাধিক শাখা থাকলে, সবচেয়ে কার্যকর শাখা রেখে অন্যগুলো আশপাশে স্থানান্তর করা হবে।

এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পুনর্বিন্যাস করা হবে।

নতুন ব্যাংকে থাকবেন মাত্র একজন সিইও, যিনি হবেন অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ একজন ব্যাংকার। বর্তমান পাঁচ ব্যাংকের কোনো সিইও এই পদে বিবেচনায় আসবেন না। তবে নিম্নস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদে ছাঁটাই হবে না, বরং পদ বা কর্মস্থলে পরিবর্তন হতে পারে।

অমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে পর্যায়ক্রমে। প্রয়োজনে সাময়িক সময়ের জন্য মোরাটোরিয়াম (তোলার সীমাবদ্ধতা) আরোপ করা হতে পারে। এতে আমানতকারী প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তুলতে পারবেন।

প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের পরিবর্তে নতুন ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব থাকবে। যেহেতু ব্যাংকটি সরকারি মালিকানাধীন হবে, তাই শেয়ার নিতে তারা আগ্রহী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।


বর্তমানে এই পাঁচ ব্যাংকের জন্য গঠিত পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হবে। নতুন পরিচালনা পর্ষদে অভিজ্ঞ ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

নতুন ব্যাংককে দ্রুত তারল্য সংকট থেকে উত্তরণ এবং লাভজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর বাস্তবায়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।

এই একীভূতকরণ দেশের ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ। দীর্ঘদিন ধরে লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ব্যাংকগুলোর প্রতি জনআস্থা ফিরিয়ে আনাই এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।

সর্বশেষ