
দেশের ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। দুর্বল আর্থিক অবস্থায় থাকা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা হিসেবে সরকার প্রায় ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে।
একীভূতকরণের আওতায় আসছে—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।
মূলধন সহায়তা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা
একীভূত ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেবে, আর বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে, যাদের আমানত এই ব্যাংকগুলোতে আটকে আছে।
ইতোমধ্যে চারটি ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সম্মতি দিয়েছে। তবে এক্সিম ব্যাংক প্রথমে তাদের আর্থিক অবস্থার স্থিতিশীলতা আনতে কিছুটা সময় চেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ক্ষমতা
এই পদক্ষেপ কার্যকর হচ্ছে সম্প্রতি প্রণীত ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫-এর ভিত্তিতে। এই অধ্যাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণ, সম্পদ হস্তান্তর, ব্রিজ ব্যাংক গঠন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ের মাধ্যমে সম্পদ হস্তান্তরের ক্ষমতা দিয়েছে। প্রক্রিয়া শুরু হলে শেয়ারহোল্ডাররা আর তাদের শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।
বাস্তবায়ন তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহমেদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
ব্যাংক খাতের জন্য বড় পরীক্ষা
এটি দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের প্রথম বড় উদ্যোগ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেলাপি ঋণ ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে ব্যাংক খাতে যে আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে, সরকার আশা করছে এই সিদ্ধান্ত তার পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।