ঢাকা   শুক্রবার ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

একমি পেস্টিসাইডসে প্রতারণার তথ্য পেয়েছে বিএসইসি

একমি পেস্টিসাইডসে প্রতারণার তথ্য পেয়েছে বিএসইসি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে গুরুতর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক তদন্ত প্রতিবেদনে কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির আগের আর্থিক কারসাজি থেকে শুরু করে আইপিও অর্থের অপব্যবহার এবং বিনিয়োগকারীদের ভোট চুরির মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

বিএসইসির তদন্তে দেখা গেছে, একমি পেস্টিসাইডস তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করার সময় তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতিপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। যেমন: পাঁচ বছরের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এবং নগদ প্রবাহে (এনওসিএফপিএস) গরমিল পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ করে ৯৭ শতাংশ পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে ১০৫ কোটি টাকা দেখানো হয়, যা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। এমনকি, একই প্রসপেক্টাসে স্বতন্ত্র পরিচালক সম্পর্কেও ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছিল।


শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিটি তাদের আইপিও তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করেছে। তারা সময়মতো নিরীক্ষিত প্রতিবেদন জমা দেয়নি এবং অনুমোদিত খাতের বাইরে অর্থ ব্যবহার করেছে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

২০২১ সালে কোম্পানিটি সাউথইস্ট ব্যাংকে ছয়টি এফডিআর খুলে তা বন্ধক রেখে শান্ত এগ্রো অ্যান্ড ট্রেডিং ফার্মসকে ১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। একইভাবে, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছেলে শরীব ট্রেড সংস্থাকে সাত কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এই বিশাল অঙ্কের ঋণ এখনো আদায় হয়নি, যা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

আইপিও প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত কারখানা নির্মাণ ও নতুন কারখানা অধিগ্রহণের বিষয়েও বড় ধরনের গরমিল পাওয়া গেছে। তদন্ত দল সরেজমিনে গিয়ে দেখে, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ইউনিটের কথা বলা হয়েছিল, সেটির কোনো অস্তিত্ব নেই। এর বদলে কয়েকটি ভাঙাচোরা ভবন ও একটি তিনতলা অফিস ভবন দেখানো হয়েছে। ব্যয় দেখানো হলেও সেটির কোনো প্রমাণ মেলেনি। নতুন কারখানা ও যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ছিল অস্বাভাবিকভাবে কম।


কোম্পানির বিরুদ্ধে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ হলো ২০২৩ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীর ভোট চুরি। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এক হাজার ২৪৬ জন বিনিয়োগকারীর ভোট কৌশলে হ্যাক করা হয়েছিল। ডিএসইর আইটি বিভাগও এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। একটি মাত্র আইপি ঠিকানা থেকে একাধিক বিনিয়োগকারীর নামে ভোট দেওয়া হয়, যার ফলে শর্ত পূরণ না করেও আইপিও তহবিলের ব্যবহারের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব পাস করানো হয়।