ঢাকা   শুক্রবার ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

ইনটেক অনলাইনের রহস্যময় উল্লম্ফন, কারসাজির শঙ্কা

ইনটেক অনলাইনের রহস্যময় উল্লম্ফন, কারসাজির শঙ্কা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ইনটেক অনলাইন লিমিটেডের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। টানা ছয় কর্মদিবস ধরে বিক্রেতাশূন্য হয়ে শেয়ারটি হল্টেড অবস্থায় রয়েছে, যা কারসাজির জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কোম্পানিটির শেয়ারদর গত ২৭ আগস্ট ছিল ২৫ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ সার্কিট ব্রেকার অতিক্রম করে এর দাম আজ বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা ৩০ পয়সায়। মাত্র কয়েক কার্যদিবসে প্রায় দ্বিগুণ হওয়া এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার বিশ্লেষকরা, কারণ কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল।


ইনটেক অনলাইনের পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা হলেও তাদের রিজার্ভের পরিমাণ ঋণাত্মক, যা প্রায় ৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। দীর্ঘ সময় ধরে লোকসান গুনছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যও ঋণাত্মক, যা বর্তমানে মাইনাস ৩৫ পয়সা। এই ধরনের দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের এমন অস্বাভাবিক উত্থান নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছে।

কোম্পানির ডিভিডেন্ড প্রদানের ইতিহাসও হতাশাজনক। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ১১ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কখনো 'নো ডিভিডেন্ড', আবার কখনো নামমাত্র ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। যেমন: ২০১৯ সালে কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি, ২০২০ সালে মাত্র ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ২০২৩ সালে আবারো 'নো ডিভিডেন্ড' এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে দিয়েছে মাত্র ০.২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড।

সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বা তিন প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৯ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ২৮ পয়সা মুনাফা ছিল। এমন নেতিবাচক আর্থিক চিত্রের মধ্যেও শেয়ারের দামের এই উল্লম্ফন নিয়ে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।


ডিএসইকে একাধিকবার চিঠির মাধ্যমে কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ তারা জানে না। তবুও, শেয়ারের এই অস্বাভাবিক উত্থান নিয়ন্ত্রণে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইনটেক অনলাইনের মতো দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবিলম্বে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, অন্যথায় বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।