
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে চরম আতঙ্কের শিকার হয়েছে। দীর্ঘদিনের পুঁজি ও আমানত সংকট, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ এবং একীভূতকরণের গুঞ্জন—এই তিন কারণে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক-এর শেয়ারদরে চলছে ধারাবাহিক পতন। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা লোকসান মেনে নিয়েও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন, যা এই পতনের গতি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এই পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তাদের এমন দুর্বল আর্থিক অবস্থানের কারণে বাজারজুড়ে চরম অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
শেয়ারদরে ভয়াবহ ধস
• গত এক মাসে এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারদরে বড় ধস নেমেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে:
• সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর ৩৫ শতাংশ কমে ৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে।
• ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে ৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
• এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৩২ শতাংশ কমে ৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪ টাকা ৪০ পয়সায় এসেছে।
• গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক উভয়ের শেয়ারদর ২২ শতাংশের বেশি কমে ৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে এসেছে।
যেহেতু এসব শেয়ারের দাম আগে থেকেই খুব কম, তাই সামান্য মূল্য পতনও শতাংশের হিসাবে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের চোখে সংকটের মূল কারণ
শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ব্যাংকগুলো একীভূত হলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এই অনিশ্চয়তার কারণে অনেকে লোকসান মেনেও শেয়ার বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, “একীভূত হওয়ার পর এসব ব্যাংকের শেয়ার আর তালিকাভুক্ত থাকবে না, তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক।”
বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী মনে করেন, ব্যাংকগুলোতে নতুন আমানত আসছে না, বরং বিদ্যমান গ্রাহকরাও টাকা তুলে নিচ্ছেন। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে, ব্যাংকগুলো হয়তো টিকবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এক কঠিন বাস্তবতার কথা তুলে ধরে বলেন, “বাস্তবে এসব ব্যাংকের দায় তাদের সম্পদের চেয়ে বেশি। তাই অভিহিত মূল্যের নিচে শেয়ারদর নেমে যাওয়া স্বাভাবিক। একীভূত হওয়ার পর সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” তার মতে, ঋণাত্মক সম্পদে চলা এসব ব্যাংকের শেয়ারের কোনো মূল্য থাকার কথা নয়।
সমাধানের পথে নজরদারি সংস্থার ভূমিকা
এই পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা এবং একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা জানানো জরুরি। বিএসইসি চাইলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করে অযাচিত গুজব ও আতঙ্ক কমাতে পারে, যাতে বাজারে একটি ন্যূনতম স্থিতি ফিরে আসে।