
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে এশিয়ার ফ্রন্টিয়ার মার্কেটগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পরিণত হয়েছে দ্বিতীয় সবচেয়ে দুর্বল পারফর্মারে। এ সময় শেয়ারবাজারে কোনো নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি, সূচক নেমেছে নীচে, এবং লেনদেনও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৭৮ পয়েন্ট বা ৭.২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪,৮৩৮ পয়েন্টে। একই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে ৮.১ শতাংশ। ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস৩০ কমেছে ১২৪ পয়েন্ট, আর শরিয়াহ ভিত্তিক সূচক ডিএসইএস নেমেছে ১০৮ পয়েন্ট। গড় দৈনিক লেনদেন কমে এসেছে মাত্র ৩.৮৪ বিলিয়ন টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ কম।
এই সময়কালে মূল বা এসএমই মার্কেট—কোনোটিতেই একটি আইপিওও আসেনি। বিআরএসি ইএলএল স্টক ব্রোকারেজের মতে, নতুন কমিশন বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিচ্ছে, ফলে আইপিও আপাতত অগ্রাধিকারে নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, বাজার পতনের পেছনে রয়েছে নানা অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কারণ—যেমন উচ্চ সুদহার, কর্পোরেট মুনাফার নিম্নগতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নেতিবাচক ইক্যুইটির প্রভাব এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা। চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় রেকর্ড ৪.২০ ট্রিলিয়ন টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেশি।
এছাড়া, বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে মার্কিন শুল্কনীতি, ভারত-পাকিস্তান ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। এসবের প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর। ব্যাংক খাতের আর্থিক দুর্বলতা ও খেলাপি ঋণের বিস্তার এই সংকট আরও গভীর করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই ২০টি সমস্যাগ্রস্ত নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত বা তরল করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। অন্যদিকে, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বাজারে বিনিয়োগযোগ্য ইক্যুইটির ঘাটতি রয়েছে, যা সংকটকে দীর্ঘায়িত করছে।
তবে কিছু ইতিবাচক দিকও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন—মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় হওয়ায় বাজারে স্থিতিশীলতার আশা জাগছে।
অন্যদিকে, মরগান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল (এমএসসিআই) বাংলাদেশের বাজার নিয়ে কোনো পরিবর্তন না এনে এটিকে "বিশেষ চিকিৎসা"র আওতায় রেখেছে। তবে ডিএসইর ২৪টি কোম্পানি এখনো এফটিএসই ফ্রন্টিয়ার ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আশার কথা হলো—নতুন কমিশন তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে। গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি এবং ইতিমধ্যে স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব পদক্ষেপ বাজারে নতুন কোম্পানির আগমন ঘটাবে এবং গড়ে তুলবে একটি গতিশীল সেকেন্ডারি বাজার।