
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিশনার পদ আট মাস ধরে শূন্য রয়েছে। এর ফলে কমিশনের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে, যা বাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পদত্যাগ করেন কমিশনার ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান। এরপর থেকে পাঁচ সদস্যের এই কমিশন চলছে চারজনের কাঁধে—চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং তিন কমিশনার: মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ। যদিও কমিশন সভা বসাতে তিনজন সদস্য থাকলেই হয়, কিন্তু একজন পদ খালি থাকায় যে কোনো সদস্য ছুটিতে গেলে কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঝুলে যায়, যা বাজারের গতি ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
বিএসইসির প্রধান দায়িত্ব হলো—শেয়ারবাজারের নিয়মনীতি প্রণয়ন, প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান, নতুন আর্থিক পণ্যের অনুমোদন এবং কারসাজি রোধ করে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা। কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিটি কমিশনারের অধীনে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগ থাকে। একজন অনুপস্থিত থাকলে বাকি সদস্যদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়। আইনে বলা আছে, কমিশনারদের সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে—একজন সদস্য না থাকলে এই ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) স্বীকার করছে যে পদটি দ্রুত পূরণ প্রয়োজন। তবে তাদের বক্তব্য, যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না বা পাওয়া গেলেও অনেকে আগ্রহী হন না।
তবে বাজারসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা এই যুক্তিকে যথেষ্ট বলছেন না। অনেকেই মনে করছেন, এখানে গোষ্ঠীগত স্বার্থ, প্রভাব বিস্তার ও রাজনৈতিক চাপ একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, “কমিশনের প্রতিটি সদস্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একটি পদ দীর্ঘ সময় খালি থাকলে ভারসাম্য হারায় পুরো সংস্থা, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে বিনিয়োগকারীদের ওপর।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঙ্ক্ষিত সংস্কার, সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিএসইসিকে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করতে দিতে হবে। আর তার জন্য দরকার দক্ষ, স্বাধীনচেতা ও সাহসী নেতৃত্ব।
এ অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট মহলের জোরালো দাবি—সরকার যেন দ্রুত সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ কমিশনারকে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। তা না হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে, যা পুরো পুঁজিবাজার ব্যবস্থাকেই অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারে।