ঢাকা   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

 ‘ভালো’ শেয়ার, ‘সস্তা’ দাম—তবু কেন বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?

 ‘ভালো’ শেয়ার, ‘সস্তা’ দাম—তবু কেন বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?

শেয়ারবাজারে একটি প্রচলিত কথা রয়েছে—"দামের নিচে সুযোগ লুকিয়ে থাকে"। অর্থাৎ শেয়ারের দাম কমলে সেটিই হয়ে ওঠে বিনিয়োগের মোক্ষম সময়। কিন্তু বাংলাদেশি বাজারে যেন উল্টো দৃশ্য।

দেশের শীর্ষস্থানীয় বহু কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন ইতিহাসের নিম্নপর্যায়ে। মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ৩–৫-এর মধ্যে নামলেও বিনিয়োগকারীদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। বরং এসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতন অব্যাহত থাকায় বাজার নিয়ে আরও শঙ্কা বাড়ছে।

মূল্য আয় অনুপাত (P/E) বলছে: দাম সস্তা, ঝুঁকি কম

বিশ্বজুড়ে পিই রেশিওকে বিনিয়োগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক ধরা হয়। কারণ,
পিই যত কম, তত কম ঝুঁকি
পিই কম মানে—অল্প সময়ে বিনিয়োগ ফেরতের সম্ভাবনা বেশি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)–এর তথ্য বলছে, শীর্ষ ৩০ কোম্পানির (ডিএস৩০) মধ্যে ১৬টির পিই রেশিও ১০-এর নিচে, যা আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিবেচিত। কিন্তু এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ শূন্যের কোঠায়।

 যেসব কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে ‘সস্তা’

গতকাল রোববার দরপতন ঘটেছে ১৬ কোম্পানির মধ্যে ১৫টির। কেবল সিটি ব্যাংকের শেয়ার অপরিবর্তিত থেকেছে।

 সবচেয়ে কম পিই রেশিও বিশিষ্ট কোম্পানিগুলো:

ক্র. কোম্পানি পিই রেশিও
প্রাইম ব্যাংক ২.৯৫
পদ্মা অয়েল ৩.৩৫
যমুনা অয়েল ৩.৫৮
বিএসআরএম ৩.৮২
পূবালী ব্যাংক ৩.৯৪
মেঘনা পেট্রোলিয়াম ৪.০১
বিএসসি ৪.৬০
ইস্টার্ন ব্যাংক ৪.৯৮

একাধিক কোম্পানির শেয়ার ৫ পিই রেশিওয়ের নিচে চলে এসেছে। তারপরও বাজারে নেই কোনো দৃশ্যমান বিনিয়োগ প্রবাহ।

তাহলে কেন কেউ এগোচ্ছে না?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূল সমস্যাটা তথ্য ও আস্থার ঘাটতিতে

“বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক বা জ্বালানি খাতের তথ্যে আস্থা রাখছেন না,” — বলছেন ড. মোহাম্মদ মুসা, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও বাজার বিশ্লেষক।

তাঁর মতে—
১️⃣ বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি আস্থা সংকট রয়েছে
২️⃣ কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত মুনাফা ও বাস্তব চিত্রে গরমিল রয়েছে—এমন বিশ্বাস থেকেই বিনিয়োগকারীরা পিছু হটছেন

বিশেষ করে ব্যাংক খাত নিয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সন্দেহ।


খাতভিত্তিক পিই রেশিও বিশ্লেষণ

সর্বশেষ সপ্তাহ শেষে ডিএসইর তথ্যে দেখা যায়—

  •  ব্যাংক খাত: গড় পিই রেশিও ৫.৪৫

  •  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: ৫.৬২

  • সেবা ও আবাসন খাত: ৮.৮৮

  •  বস্ত্র খাত: ৯.৩৮

  • সিমেন্ট খাত: ৯.৭৬

অর্থাৎ, সব চেয়ে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর শেয়ারই সবচেয়ে কম দামে লেনদেন হচ্ছে।

 ভালো শেয়ারের প্রতিও ‘অন্যায্য আচরণ’

ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বলছেন—

“এখন বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে ভালো বা খারাপ কোম্পানি আলাদা কোনো বিষয় নয়। সবার লক্ষ্য একটাই—যেকোনোভাবে লোকসান থেকে রক্ষা পাওয়া।”

অতীত অভিজ্ঞতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা, এবং বারবার বাজারে ধসের ঘটনা—এই সবকিছু মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের ‘সেফ মুডে’ চলে গেছেন।

ওয়ারেন বাফেট যা বলেছিলেন

বিশ্বের অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বলেছিলেন:

“কম দামে খারাপ কোম্পানি নয়, বরং ন্যায্যমূল্যে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করাই শ্রেয়।”

কিন্তু বাংলাদেশি বাজারে দেখা যাচ্ছে—ভালো কোম্পানির শেয়ারও বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়ছে না।

উপসংহার: সমাধান কী?

  • তথ্য বিশ্লেষণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা

  • বাজার নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা তৈরি করা কারসাজিমুক্ত ও নীতিনিষ্ঠ লেনদেন পরিবেশ গড়ে তোলা

তবেই বাজার ফিরবে।
তবেই ভালো কোম্পানিগুলো প্রকৃত মূল্য ফিরে পাবে।

আপনি কি মনে করেন এখনই ভালো শেয়ার কিনবার সময়? নাকি আরও অপেক্ষা করা উচিত? মতামত দিন নিচে কমেন্টে।
আরও বিশ্লেষণ ও তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন শেয়ারবিজনেস২৪ডটকম–এর সঙ্গে।