
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিল এবং এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হ্যাচারি প্রাইভেট লিমিটেডের বন্ধক রাখা সম্পদ নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া। প্রায় ৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের শান্তিনগর শাখা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাজীপুর অর্থঋণ আদালতের নির্দেশে সংবাদপত্রে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রতিষ্ঠান দুটি ২০২৪ সালের ৩১ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকের আহ্বান করা দরপত্র আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে। বন্ধক রাখা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে গাজীপুরে অবস্থিত ১৫.৭৭ একর জমি এবং তার ওপর নির্মিত কারখানার ভবন।
ন্যাশনাল ফিড মিলের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অডিটবিহীন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ ৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যাংক এশিয়ায় ২৭ কোটি ৭৪ লাখ, মেঘনা ব্যাংকে ১৭ কোটি ১৬ লাখ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কোম্পানির স্থায়ী সম্পদ ২৮ কোটি ১১ লাখ এবং মোট সম্পদ ১৭৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসান করে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি, যা ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথমবার ঘটল।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ঋণ পরিশোধ এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কোম্পানিটি ১ কোটি ৮ লাখ শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারবাজার থেকে ১৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তখন আইসিবি ক্যাপিটাল এবং পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্টস ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। প্রথম বছরে প্রতিষ্ঠানটি ২২৫ কোটি টাকা রাজস্ব এবং ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করে এবং ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে।
কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে কোম্পানির কার্যক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে খারাপ হতে থাকে। ২০২৪ সালে রাজস্ব ৩০ কোটি টাকায় নেমে আসে এবং নিট লোকসান দাঁড়ায় ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব ৫৩ শতাংশ কমে ৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় নেমে আসে এবং প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা লোকসানে পড়ে।
প্রসঙ্গত, কোম্পানিটি ২০১৫ সালে আখতার হোসেন বাবুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে ফিড খাতে সম্ভাবনা দেখে ব্যক্তিগত সঞ্চয় বিনিয়োগ করে তিনি কোম্পানিটি চালু করেছিলেন। তবে শুরুর সাফল্যের পর ঋণ, কার্যক্ষমতা হ্রাস এবং বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে শেষপর্যন্ত সম্পদ বিক্রির পথে হাঁটতে হলো।