ঢাকা   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ঘোষণা ছাড়াই শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে এসকোয়্যার নিট

ঘোষণা ছাড়াই শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে এসকোয়্যার নিট

এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক ও প্লেসমেন্ট শেয়ারধারকদের মোট ১০ কোটি শেয়ারের মধ্যে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩০ শেয়ারের উপর প্রাপ্ত বোনাস ঘোষণা ছাড়া বিক্রয় করা যাবে। কোম্পানির আইপিও প্রসেপক্টাস থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হিসাব করে দেখা গেছে, বোনাসের নামে পাওয়া এসব শেয়ার বিক্রি করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডি, পরিচালক ও প্লেসমেন্টধারীরা।

প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে নানা সমালোচনার মধ্যেই কোম্পানিটির ৭০ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার রয়েছে। কাল মঙ্গলবার শুরু হবে কোম্পানিটির লেনদেন।

এর আগে যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (ইআই) বিডিংয়ের ভিত্তিতে কোম্পানিটির শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হয় ৪৫ টাকা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনক্রমে কাট-অফ প্রাইসের ১০ শতাংশ কমে অর্থাৎ ৪০ টাকা ৫০ পয়সায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে পারেন। এজন্য কোম্পানিটি লটারির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বরাদ্দ দেয়।

এদিকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে যাওয়া কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা দরে ইস্যু করার যোগ্যতা রয়েছে। ‘আর্নিংস বেজড ভ্যালু পার শেয়ার’ পদ্ধতিতে গণনা করে কোম্পানিটির শেয়ারদর এটি পাওয়া যায়।

অর্থাৎ অতিরঞ্জিত শেয়ার দর নিয়ে লেনদেন করতে যাচ্ছে এসকোয়্যার নিট। বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির বিডিংয়ে যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট শেয়ারের প্রান্তসীমা মূল্য (কাট অফ প্রাইস) নির্ধারণ করে ৪৫ টাকা। এরপর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৪০ টাকা দরে শেয়ার কেনার আবেদন করেন। গত জানুয়ারিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আইপিওর চাঁদা গ্রহণ করে বস্ত্র খাতের কোম্পানিটি। এর শেয়ারের জন্য নয় গুণের বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।

প্রসপেক্টাস অনুসারে, ১৫০ কোটি টাকার আইপিও তহবিলের ৬৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ অর্থ ভবন ও পূর্ত কাজে খরচ করবে এসকোয়্যার নিট। তহবিল হাতে পাওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। ২৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ অর্থ ২২ মাসের মধ্যে প্লান্টের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বিনিয়োগ করা হবে। ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ অর্থ খরচ করা হয়েছে আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে।

ব্যবসায়িক প্রোফাইল পর্যালোচনায় দেখা যায়, এসকোয়্যার গ্রুপের শতভাগ রফতানিমুখী নিটওয়্যার কোম্পানিটি ২০০১ সালে কার্যক্রম শুরু করে। ২০১২ হিসাব বছরে তাদের বার্ষিক বিক্রি ছিল ৩৮১ কোটি টাকা, ২০১৮ হিসাব বছরে যা ৪৮৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ের ব্যবধানে তাদের করপরবর্তী মুনাফা ১৭ কোটি টাকা থেকে ৩৪ কোটির ঘরে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ হিসাব বছরে তাদের বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ, পরবর্তী হিসাব বছরগুলোয় পর্যায়ক্রমে যা ছিল ৭ দশমিক ৪১, ১ দশমিক ৩৬, শূন্য দশমিক ৯৩, শূন্য দশমিক ৬১ ও ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং নিট মুনাফা প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ সময় মোট সম্পদের বিপরীতে কোম্পানির নিট রিটার্ন ছিল ৫ দশমিক ১২ শতাংশ, ইকুইটির বিপরীতে যা ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। গ্রাহকদের জন্য শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজগুলোর প্রস্তুত করা রিসার্চ নোট অনুসারে, প্রথমার্ধে কোম্পানিটির গ্রস মুনাফার মার্জিন ছিল ২০ শতাংশের বেশি, পরিচালন মুনাফার মার্জিন ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং নিট মুনাফার মার্জিন ৭ শতাংশের বেশি।

আইপিওর পর এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মোট শেয়ারের ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৫ দশমিক ৫ এবং বাকি ১০ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আইপিও-পরবর্তী শেয়ারসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৫৫ পয়সা, শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ৩৬ টাকা ৫৩ পয়সা। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে তা হয়েছে যথাক্রমে ১ টাকা ৫১ পয়সা ও ৩৮ টাকা ৪ পয়সা।

আইপিও শেয়ারের লক ইন স্ট্যাটাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, আইপিওর জন্য ইস্যু হওয়া প্রায় সাড়ে ৩ কোটি শেয়ারের ৭০ শতাংশ প্রথম কার্যদিবসেই লক ফ্রি থাকবে, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বছরের শেষ দিকে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩১ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শতভাগ শেয়ার বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত হবে।

কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে প্রাইম ফিন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। আর রেজিস্টার টু দ্য ইস্যুর দায়িত্বে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।