
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পুরোটা দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির একাধিক শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট, চ্যানেল ১২, ওয়াইনেট এবং আই২৪নিউজ গতকাল সোমবার এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনার ফলে গাজার প্রতিটি অংশে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযান সম্প্রসারিত হবে। এমনকি হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের যেসব এলাকায় রাখা হয়েছে, সেগুলোও এই অভিযানের আওতায় আসবে।
চ্যানেল ১২-এর প্রধান রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমিত সেগালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুরোপুরি আত্মসমর্পণ না করলে হামাস নতুন করে কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেবে না। আমরাও আত্মসমর্পণ করব না। তাই এখনই পদক্ষেপ না নিলে জিম্মিরা না খেয়ে মারা যাবেন এবং গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণেই থেকে যাবে।’
নেতানিয়াহুর এমন পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে পরিকল্পনাটি প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে আল-জাজিরা নেতানিয়াহুর দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা শুরু হওয়ার প্রায় দুই বছর হতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তার আগেই এই পরিকল্পনার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি হামলা ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির কারণে গাজায় প্রাণহানি বাড়ছেই। ক্ষুধায় কাতর জনগণের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করতে এবং যুদ্ধ বন্ধে নেতানিয়াহুর প্রতি আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে।
গতকাল সোমবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৬ জন ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া মানুষ। গাজার চিকিৎসা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে নেতানিয়াহু নিজ দেশেও প্রবল চাপের মুখে আছেন। সম্প্রতি জিম্মি রম ব্রাস্লাভস্কি এবং এভিয়াটার ডেভিডের দুর্বল-শীর্ণ চেহারার ভিডিও প্রকাশের পর ওই চাপ আরও বেড়ে গেছে।
গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের শুরুতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের সবাইকে যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। শত্রুর পরাজয়, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং গাজা যেন আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে না ওঠে, এসবই নিশ্চিত করতে হবে।’
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান এদিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নৃশংসতার বিষয়ে ‘চোখ বন্ধ রাখার’ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, একগুঁয়েমি, অহংকার এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে গড়িমসি করার কারণে নেতানিয়াহু ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবনকে ‘ঝুঁকির মুখে’ ফেলেছেন।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার ৯৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশু রয়েছে অন্তত ১৮ হাজার ৪৩০ জন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, হামাসের হাতে এখনও ৪৯ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।