ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

নওগাঁয় সোলার প্যানেলের সড়কবাতি ৭০ শতাংশ নষ্ট, পথচারীদের দূর্ভোগ

গ্রামবাংলা

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৯ জুলাই ২০২৫

সর্বশেষ

নওগাঁয় সোলার প্যানেলের সড়কবাতি ৭০ শতাংশ নষ্ট, পথচারীদের দূর্ভোগ

  বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার দেশে বিকল্প হিসেবে নওগাঁর বিভিন্ন সড়কে সোলার প্যানেল চালিত ল্যাম্পপোস্ট (সড়ক বাতি) স্থাপন করেছিল। যেখানে সড়ক বাতির আলোয় উপকৃত হতো পথচারীরা। এসব সড়ক বাতি ৫ বছর চলার পর এখন ৭০ শতাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে পথচারীদের প্রতিনিয়ত দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত সংস্কারের দাবী জানান এলাকাবাসী।

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়-২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৭৪১ টি সোলার সিস্টেম ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। যেখানে ব্যয় হয় ৪৩ কোটি ৭২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বর্তমানে ৭০ শতাংশ সড়কবাতি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার তালতলি থেকে দুবলহাটি হয়ে কাটখৈইর বাজার পর্যন্ত দুরুত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এ সড়ক দিয়ে সহজেই জেলার মান্দা ও রানীনগর উপজেলার কিছু এলাকা জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। সন্ধ্যার পর চুরি ও ছিনতাইয়ের ভয়ে মানুষ নির্জন এ রাস্তা দিয়ে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া চলাচল করত না। এ সড়কটি আলোকিত করতে গত ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে (১০ বছর আগে) জেলায় টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্প থেকে প্রায় ২০০টি সোলার সিস্টেম ল্যাম্পপোস্ট (সড়ক বাতি) স্থাপন করা হয়। ফলে সন্ধ্যার পর নিজ থেকে জ্বলে উঠে সোলার আলোয় আলোকিত হতো সড়কটি। যেখানে সন্ধ্যার পর  ভ্যান, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারিরা নিবিঘ্নে চলাচল করতে পারতো। কিন্তু ৫ বছর পর এ সড়কবাতি গুলো অকেজো হয়ে পড়ে। শুধু এ সড়কই না, জেলার বিভিন্ন সড়ক ও হাট-বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে সোলার প্যানেল চালিত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে কোনটার খুঁটি থাকলেও নেই সোলার প্যানেল ও বাল্ব। আবার সোলার প্যানেল থাকলেও নেই বাল্ব। কোথাও ল্যাম্পপোস্টের খুঁটি ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। আবার সোলার প্যানেল ও বাল্ব থাকলেও ব্যাটারি অকেজো হওয়ায় কোন কাজে আসছে না।

স্থানীয় ও পথচারীরা জানান- সড়ক অন্ধকার থাকায় তারা স্বাচ্ছন্দ্যে আগের মতো আর চলাচল করতে পারছে না। সড়কে চুরি-ছিনতাই ও অপরাধসহ সড়ক দূর্ঘটনা বেড়েছে। অন্ধকার থাকায় পথচারীদের চলাচলও কমেছে। সড়কবাতিগুলো দ্রুত সংস্কার করার দাবী জানান এলাকাবাসী।

মান্দা উপজেলার স্কুল শিক্ষক রিমন মোরশেদ বলেন- বাড়ি থেকে কাটখৈইর হয়ে তালতলি সড়ক দিয়ে নওগাঁ শহরের আসতে সময় কম লাগে এবং সুবিধা হয়। অনেক সময় কাজ শেষে ফিরে যেতে রাত হয়। সন্ধ্যার পর ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সড়ক আলোকিত হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে আবারও সন্ধ্যার পর অন্ধকার হওয়ায় এ সড়কে চলাচল কমে গেছে। পথচারীরা যতদ্রুত সম্ভব শহরে কাজ শেষে দিনের আলোয় বাড়ি চলে যায়।

সদর উপজেলার গোয়ালী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন- বাড়ির পাশ দিয়ে কাটখৈইর সড়ক। এ সড়কে এক সময় অনেকগুলো ল্যাম্পপোস্ট ছিল। দীর্ঘ সময় চলার পর সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন থেকে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় অনেকটা চুরি হয়ে গেছে। সড়ক অন্ধকার থাকায় অনেক ধরনের অপরাধ বেড়েছে। তবে আবারও যদি সংস্কার করা হয় তাহলে পথচারীদের জন্য সুবিধা হবে।

হাঁসাইগাড়ী গ্রামের অটোরিকশা চালক আহাদ আলী বলেন- গোয়ালী থেকে হাঁসাইগাড়ী গ্রাম পর্যন্ত বিলের মাঝ দিয়ে
তিন কিলোমিটার সড়ক বয়ে গেছে। এরমাঝে কোন বসতবাড়ি নেই। সন্ধ্যার পর সুনশান নিরবতা। চুরি ও ছিনতাইয়ের ভয়ে সন্ধ্যার পর অটোরিকশা নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা হয়না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন নিয়ে কেউ আসতে চাইনা।

নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা আশেকুর রহমান বলেন- রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজার আলোকিতকরণ করতে সড়কবাতিগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন মেরামত না করা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ওয়ারেন্টি মেয়াদ শেষ হওয়া সহ নানা কারণে সড়কবাতিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ইতোমধ্যে সড়কবাতিগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সংস্কার করা হবে।
 

সর্বশেষ