
ইরানের বিরুদ্ধে ১৩ জুন আগ্রাসন চালানোর পাশাপাশি অশুভ আরেকটি হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে সময়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে অন্তত ২০টি ফোন করেছিলেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের দাবি ছিল ভয়াবহ, তাঁরা শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ফোন করে বলেছিলেন, ১২ ঘণ্টার মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁদের ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করার ভিডিও বার্তা রেকর্ড করে সেগুলো পাঠাতে হবে, না হলে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্ট এ–সংক্রান্ত একটি অডিও হাতে পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, এক ইসরায়েলি গোয়েন্দা ইরান রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) এক জেনারেলকে ফোন করে বলছেন, ‘আমরা আপনাকে হত্যা করব, আপনার পরিবার, আপনার সন্তানদের—সবাইকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলব। আমরা আপনার গলার শিরার চেয়েও কাছাকাছি আছি।’
১৩ জুন আকস্মিক হামলা চালিয়ে ইরানের কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে এসব ফোন করা হয়েছিল। ফোনগুলো করা হয়েছিল ইরানের ওই সব জেনারেলের কাছে, যাঁরা নিহত শীর্ষ কমান্ডারদের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।
এভাবেই ভয় দেখিয়ে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে জিততে চেয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু ইরানের একজন জেনারেলও আতঙ্কের কাছে মাথা নত করেননি। কেউ পালাননি, কেউ দেশদ্রোহিতা করেননি। এর ফলে ইসরায়েলকে এ অভিযানে পুরোপুরি ব্যর্থ হতে হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের ফাঁস করা ওই অডিওতে ইসরায়েলের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের এ কৌশল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের লক্ষ্য ছিল ইরান সরকারকে বিভক্ত করে ফেলা, যেন তারা দুর্বলতার মুহূর্তগুলোকে কাজে লাগাতে পারে।
ইসরায়েলের ওই গোয়েন্দারা সম্ভবত মোসাদ বা দেশটির সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী আমানের সদস্য, প্রত্যেকে ফারসি ভাষায় পারদর্শী।
ইসরায়েলি গোয়েন্দারা আইআরজিসির জেনারেলদের ফোনে হত্যার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, যদি তাঁরা ইরান সরকারকে সহযোগিতা করবে না উল্লেখ করে ভিডিও তৈরি করে তাঁদের কাছে না পাঠান, তবে জেনারেলদের তাঁদের পরিবারসহ হত্যা করা হবে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে সেসব ভিডিও পাঠাতে বলেছিলেন।
অডিওতে ইসরায়েলি এক গোয়েন্দাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি কি (নিহত ব্যক্তিদের) পরবর্তী তালিকার নাম হতে চান?’
তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট, জনসমক্ষে বিক্ষোভ সৃষ্টি করে ইরানের সেনাবাহিনীকে হতাশ করা এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।
ইরানি জেনারেলদের এমন কোনো ভিডিও এখন পর্যন্ত সামনে আসেনি বা কোনো জেনারেলের দেশত্যাগের খবরও পাওয়া যায়নি।
এর আগে ১৩ জুন হামলার পরই ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছিল, ইরানের দ্বিতীয় স্তরের যেসব কমান্ডার ও শাসনব্যবস্থার কর্মকর্তাদের ইসরায়েল হত্যা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তাঁদের হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে মোসাদ।
ইরানি কর্মকর্তাদের কেউ দরজার নিচ দিয়ে চিঠি পেয়েছেন, আবার কেউ ফোনকল পেয়েছেন কিংবা কারও স্ত্রীকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব বার্তার লক্ষ্য ছিল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া যে মোসাদ জানে, ওই কর্মকর্তারা কে কোথায় আছেন এবং তাঁরা মোসাদের নাগালেই আছেন।