এআই কি কোরআনের আত্মিক বার্তা ঠিকভাবে অনুবাদ করতে পারবে? গবেষণায় সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা

কোরআন শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং তা এক আধ্যাত্মিক ও নৈতিক পথনির্দেশ, যার প্রতিটি আয়াত হৃদয়ে সৃষ্টি করে ভক্তি, ভয়, আশা ও অনুশোচনার মিশ্র অনুভূতি। তবে অনারবিভাষীদের জন্য এই মহান গ্রন্থের তাৎপর্য তুলে ধরতে অনুবাদ জরুরি হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কি এই অনুবাদে শুধু শব্দ নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত অনুভূতিও ঠিকভাবে রূপান্তর করতে পারবে?

সম্প্রতি কামেল গানুন ও মোহাম্মদ আলসুহাইবানির নেতৃত্বে এক গবেষণায় কোরআনের ৬,২৩৬টি আয়াতের আরবি ও সাতটি ইংরেজি অনুবাদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়। এতে এআই ট্রান্সফরমার ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (টিএলএম) ব্যবহার করে আয়াতগুলোর অনুভূতি—ইতিবাচক, নেতিবাচক ও নিরপেক্ষ—শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, মূল আরবি আয়াতগুলোতে প্রায় ৬৬% নিরপেক্ষ, ২৪% নেতিবাচক এবং ১০% ইতিবাচক অনুভূতি পাওয়া যায়। তবে ইংরেজি অনুবাদে এই অনুপাতে ভিন্নতা দেখা দেয়, যা বোঝায় যে, মানুষের করা অনুবাদেও অনুভূতির সঠিক রূপান্তর সবসময় সম্ভব হয় না। এআই এই পার্থক্য শনাক্তে সহায়ক হলেও সরাসরি অনুবাদে এখনো নির্ভরযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, সুরা বাকারা’র ‘আল-মুফসিদুন’ শব্দটি ইউসুফ আলির অনুবাদে ‘মিসচিফ’ হয়ে পড়ে নিরপেক্ষ, যদিও মূল শব্দে আছে তীব্র নেতিবাচকতা—যা এআই শনাক্ত করতে পারে, তবে নিজে অনুবাদে এটি বোঝার সক্ষমতা সীমিত।

গবেষণায় আরও উঠে আসে, শাস্ত্রীয় আরবির রূপক অর্থ ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট এআই সহজে ধরতে পারে না। যেমন, ‘বাইদুন মাখফিয়্যাতুন’ (লুকানো ডিমের মতো) একটি রূপক, যা পবিত্রতা ও সৌন্দর্য বোঝায়; পিকথলের অনুবাদে তা নিরপেক্ষভাবে প্রকাশ পায়। এই সূক্ষ্ম অর্থ উপলব্ধির জন্য এআই-এর প্রশিক্ষণ ডেটা হতে হবে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিকভাবে গভীর।

তবে আশাব্যঞ্জক দিক হলো, গবেষণায় ব্যবহৃত টিএলএম মডেলগুলো ৮৯% আয়াতের অনুভূতি সঠিকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করতে পেরেছে। ভবিষ্যতে উন্নত প্রশিক্ষণ, শাস্ত্রীয় আরবি ও ধর্মতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণের সমন্বয়, এবং বহুস্তরীয় অনুভূতি ধরতে সক্ষম এআই মডেল তৈরি হলে এই প্রযুক্তি কোরআনের অনুবাদে একটি শক্তিশালী সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।

অতএব, এআই সরাসরি কোরআনের অনুবাদক হিসেবে ব্যবহার করা এখনই উপযুক্ত নয়। তবে এটি মানুষের অনুবাদ যাচাই, অনুভূতির বিশ্লেষণ ও ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণে এক যুগান্তকারী হাতিয়ার হিসেবে ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে—যদি ধর্মীয় ও মানবিক সংবেদনশীলতার সাথে উন্নয়ন হয়।