
আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশীপ গ্রীন জিরো কূপন বন্ড ইস্যুতে জালিয়াতির কারনে সালমান এফ রহমান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছে বিএসইসি। এছাড়া সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে আজীবন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টের সাবেক সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছর নিষিদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা, আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা ও ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিংকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে কমিশনের ৯৬৫ তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) বিএসইসির পরিচালক ও মূখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের এবং ১০০০ কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ডটি ৪ জুন ২০২৩ তারিখে কমিশনের ৮৭১তম সভায় অনুমোদিত হয়। পরে ১২ জুলাই ২০২৩ তারিখে এটির সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয়।
এই বন্ডটির ইস্যুকারী ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, যা ২ মার্চ ২০২৩ গঠিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোম্পানিটি গঠনের পরপরই ১১ এপ্রিল ২০২৩ উক্ত বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয়/উন্নয়নের জন্য উত্তোলন করা হয়, যা কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
এছাড়াও উক্ত বন্ডটির জামিনদার ছিল আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, পরামর্শক ও ব্যবস্থাপক হিসেবে ছিল আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে ছিল সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ECRL), এবং নিরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে এম. জে. আবেদিন অ্যান্ড কো., চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি উক্ত বন্ড ইস্যু করেনি, মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল) বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এ বিষয়ে ‘পুঁজিবাজার অনুসদ্ধান ও তদন্ত কমিটি’ কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে এবং এর প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে। এ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন-
আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করার এবং পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যানআহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করার এবং পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের তৎকালীন সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সকল ধরণের কাজে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আইএফআইসি ব্যাংককে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া, আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, মো. গোলাম মোস্তফা, মো. জাফর ইকবাল (এনডিসি), কাওমরুন নাহার আহমেদ এবং তৎকালীন স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকেও সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কমিশন।
বিএসইসি জানায়, পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কমিশনের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে।