ঢাকা   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

নৈতিকতা মেনে চললেই ব্যবসায় আসে বরকত

নৈতিকতা মেনে চললেই ব্যবসায় আসে বরকত

একজন মুসলমান ব্যবসায়ীর কাছে লাভ-লোকসানের হিসাব যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ। ব্যবসা এমন এক মাধ্যম, যার মাধ্যমে মানুষে মানুষে সহযোগিতা গড়ে ওঠে, পারস্পরিক চাহিদা পূরণ হয় এবং সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই ইসলাম ব্যবসাকে শুধু আইন-কানুন বা নিয়ম-নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং এর প্রতিটি ধাপে নৈতিকতা, চরিত্র ও আত্মিক বিশুদ্ধতার প্রতিও জোর দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন,

وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ 

‘তোমরা সৎকাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারে একে অন্যকে সহযোগিতা কোরো, আর পাপ ও জুলুমের কাজে একে অন্যকে সহযোগিতা কোরো না।

(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)

তাই ব্যবসা করার আগে আমাদের উচিত নিজের উদ্দেশ্য ঠিক করা। যদি কেউ হালালভাবে উপার্জন করে নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে চায়, তাহলে আল্লাহ তার রিজিকে বরকত দেন এবং তার ব্যবসা সহজ করে দেন। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘ব্যবসা শুরু করার সময় উচিত, বিশুদ্ধ নিয়ত করা, আল্লাহর ওপর ভরসা করা এবং হারাম বা সন্দেহজনক পথ পরিহার করা। মানুষ যাতে কারো কাছে হাত না পাতে, সে জন্য নিজের উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করাই ভালো।

এতে নিজের ঈমানও বজায় থাকে এবং পরিবার-পরিজনের হকও আদায় হয়।’

(ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৪)

সততা একজন ব্যবসায়ীর শ্রেষ্ঠ গুণ আর সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততা ইসলামে ব্যবসার মূলভিত্তি। একজন সৎ ব্যবসায়ী শুধু দুনিয়াতে সম্মানিত নয়, আখিরাতেও তার সম্মান অনেক উঁচু। এ বিষয়ে আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন :

التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ

‘সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।

(তিরমিজি : ১২০৯)

হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا

‘যতক্ষণ না ক্রেতা ও বিক্রেতা আলাদা হয়ে যায়, ততক্ষণ তাদের উভয়েরই লেনদেন বাতিল করার অধিকার থাকে। যদি তারা সত্য কথা বলে ও স্পষ্টভাবে সবকিছু জানায়, তাহলে তাদের লেনদেনে বরকত হবে। আর যদি তারা গোপন করে বা মিথ্যা বলে, তাহলে সেই লেনদেন থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)

আল্লাহ তাআলা ঋণগ্রহীতার প্রতি সহানুভূতি দেখানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন,

وَ اِنۡ كَانَ ذُوۡ عُسۡرَۃٍ فَنَظِرَۃٌ اِلٰی مَیۡسَرَۃٍ ؕ وَ اَنۡ تَصَدَّقُوۡا خَیۡرٌ لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۸۰﴾

‘আর যদি ঋণগ্রহীতা কষ্টে থাকে, তাহলে তার সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। আর যদি তোমরা ঋণ আদায় না করে তা মাফ করে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে।