
খাদ্যনিরাপত্তা শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়—এটি মানুষের মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ইসলামি নৈতিকতার আলোকে খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা শুধু মানবিক নয়, বরং একটি ঐশী দায়িত্ব। কোরআন ও হাদিসে খাদ্যের গুরুত্ব এবং তা সবার জন্য সহজলভ্য করার নির্দেশনা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। আজকের দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈষম্যের পৃথিবীতে ইসলাম একটি সময়োপযোগী সমাধান কাঠামো তুলে ধরে।
ইসলামে খাদ্যকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করো এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো।” (সুরা নাহল: ১১৪)। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি রাতে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে, সে আমার উম্মতের সদস্য নয়।” এই নির্দেশনাগুলো খাদ্যনিরাপত্তাকে একটি সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে তুলে ধরে।
খাদ্যনিরাপত্তা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে একটি মানবাধিকার। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল।” (সুরা মায়িদা: ৩২)। খাদ্যের অভাবে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তা এই মানবিক মূল্যবোধের লঙ্ঘন। জাতিসংঘের এসডিজি–২ ‘জিরো হাঙ্গার’ লক্ষ্যের সঙ্গে ইসলামি শিক্ষা পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলামি অর্থনৈতিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন জাকাত, সদকা ও ওয়াক্ফ—এসবের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, শহর-গ্রামের বৈষম্য, দিনমজুর ও রোহিঙ্গাদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইসলাম এ সমস্যার বাস্তব সমাধানে নীতিগত দিকনির্দেশনা দেয়। যেমন, জাকাতের তহবিল সংগ্রহ করে খাদ্য ব্যাংক গড়া যেতে পারে। হাদিসে বলা হয়েছে, “দান করো—even একটি খেজুর হলেও, তা ক্ষুধা দূর করে এবং পাপ মোচন করে।” (সহিহ মুসলিম: ১০১৬)
খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসলাম কিছু ব্যবহারিক কাঠামোও দেয়:
১. জাকাত ব্যবস্থাপনা: একটি কেন্দ্রীভূত জাকাত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে খাদ্য বিতরণে এর ব্যবহার।
২. খাদ্য অপচয় রোধ: “খাও ও পান করো, তবে অপচয় করো না।” (সুরা আরাফ: ৩১)।
৩. টেকসই কৃষি: পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে উৎপাদন বাড়ানো।
৪. সামাজিক উদ্যোগ: মসজিদকেন্দ্রিক খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চালু করা।
রাসুল (সা.) বলেন, “তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই, যে মানুষের জন্য কল্যাণকর।” (সহিহ বুখারি: ৬০২৬)। ইসলামের নির্দেশনা ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগেই গড়া সম্ভব একটি ক্ষুধামুক্ত, মর্যাদাসম্পন্ন ও ন্যায়ভিত্তিক মানবিক সমাজ।