
ঈদের দিন রাজধানীতে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ব্যস্ত সময়ে দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের কয়েকজন চালক ও অপারেটর মাঠের কাজ ফেলে অংশ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসকের সংবাদ সম্মেলনে। গত শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানের নগরভবনে আয়োজিত এই সম্মেলনের সময় চলছিল বর্জ্য অপসারণের চূড়ান্ত পর্ব। তবে, মাঠের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ভারী যানবাহনের অন্তত পাঁচজন চালক ও অপারেটর উপস্থিত ছিলেন সেখানে, যা নিয়ে ডিএনসিসির অভ্যন্তরে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে উপস্থিত ছিলেন ১২ নম্বর পে-লোডারের অপারেটর আবুল হোসেন, কম্পেক্টর পরী-১০০৩ এর চালক মো. হারুন, পরী-১০১০ এর চালক ইসমাইল হোসেন, পরী-১০০৬ এর চালক নূর হোসেন নিজাম এবং কনটেইনার ক্যারিয়ার পরী-১০৩৪ এর চালক হোসেন মন্টু। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সকলেই পরিবহন চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় হিসেবে পরিচিত।
ডিএনসিসির কর্মীদের অভিযোগ, এই নেতারা মূলত নিজেদের সংগঠনিক প্রভাব খাটিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন এবং এর ফলে নিরবচ্ছিন্ন বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের রাতেই শতভাগ বর্জ্য অপসারণের দাবি করা হয়, তবে পরদিন রোববার সকালে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় এবং অলিগলিতে কোরবানির বর্জ্য দেখা যায়—যা দাবি ও বাস্তবতার মধ্যে ফারাক স্পষ্ট করে।
আবুল হোসেন দাবি করেন, তিনি সংবাদ সম্মেলনে যাওয়া সত্ত্বেও রাত আড়াইটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং একজন সহকর্মীকে দিয়ে সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। অনুরূপভাবে, চালক নূর হোসেন নিজাম জানান, তিনি কাজের মাঝেও এক সহকর্মীকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—কাজের ক্লান্তিকর সময়ে দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য কি কাম্য?
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য চালকেরাও কাজ করেছেন দাবি করলেও তাদের উপস্থিতি এবং দায়িত্ব পালনের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের নির্দিষ্ট এলাকায় কাজ করার কথা ছিল, তাদের উপস্থিতি অন্যত্র কেবল দায়িত্বহীনতাই নয়, বরং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, দায়িত্ব ফেলে কেন তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।
ডিএনসিসির মতো সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দায়িত্বশীল কর্মীদের এমন ভূমিকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব স্পষ্ট। সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ কোনোভাবেই মাঠের জরুরি কাজকে উপেক্ষা করার অজুহাত হতে পারে না। নগরবাসীর স্বাস্থ্য ও সেবার প্রশ্নে এমন অবহেলা ভবিষ্যতে ঠেকাতে চাই শক্তিশালী নজরদারি এবং শৃঙ্খলা।