
গত এক দশকে বাংলাদেশের স্টার্টআপ খাতে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। তবে খাত–সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশের বাজারের আকার বিবেচনায় এই অঙ্ক আশানুরূপ নয়। স্টার্টআপ খাত এখনো বৈশ্বিক মান, প্রচার ও কাঠামোগত দিক থেকে পিছিয়ে আছে। ‘বিকাশ’–এর মতো কয়েকটি সফল উদ্যোগ থাকলেও, সামগ্রিক অগ্রগতি খুবই ধীর। ২০২৪ সালে বিনিয়োগ কমে এসেছে মাত্র ৪৫ মিলিয়ন ডলারে। ফলে এই খাতকে কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগিয়ে নিতে জরুরি হয়ে পড়েছে স্পষ্ট, স্থিতিশীল ও বাজারবান্ধব নীতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টার্টআপ একটি উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ। এক সময় দেশে স্টার্টআপ প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল, বিশেষ করে করোনার সময়। তবে এখনো নীতিমালার অনুপস্থিতি এবং দুর্বল কাঠামোর কারণে খাতটি এলোমেলোভাবে চলছে। পরামর্শক সংস্থা লাইটক্যাসল পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে স্টার্টআপ খাতে মোট ৪৮০টি বিনিয়োগ হয়েছে, যার ৯২% এসেছে বিদেশ থেকে। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে আর্থিক খাত।
রোডম্যাপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে স্টার্টআপে ‘সিরিজ এ’ পরবর্তী অর্থায়ন মাত্র ৫%, অথচ ৮৩%ই ‘প্রি সিড’ পর্যায়ে আটকে আছে। স্টার্টআপগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগ পেলেও পরবর্তী ধাপে যেতে পারছে না। সমস্যা আরও রয়েছে—ভালো রাজস্ব মডেল নেই, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী কম, দক্ষ জনবল অভাব, এবং করপোরেট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কাঠামো কার্যকর নয়।
বাজার সচল করতে এসবিএল একটি পরামর্শ দিয়েছে—পরবর্তী বাজেটে ৪০০ কোটি টাকার ‘ফান্ড অব ফান্ডস’ গঠন করা হোক। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি, করছাড়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা পাঠানোর নীতি সহজ করাসহ নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। ডিজিটাল পরিচিতি ও তথ্য প্রবাহ বাড়ানোর দিকেও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী শওকত হোসেন বলেন, এই এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিবেশী দেশের তুলনায় নগণ্য। বাংলাদেশের স্টার্টআপে বিনিয়োগের পথ ধীর, জটিল এবং নীতিগত প্রতিবন্ধকতায় ভরা। বেশিরভাগ কোম্পানি বাধ্য হয়ে সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ে নিবন্ধন করে। তাঁর মতে, বাংলাদেশেও “স্টার্টআপ ফার্স্ট” নীতি চালু করা প্রয়োজন। ঢাকাকেন্দ্রিক চিন্তার বাইরে গিয়ে দেশজুড়ে স্টার্টআপ সম্ভাবনা ছড়িয়ে দিতে হবে।
সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের স্টার্টআপ খাত এখনো সম্ভাবনাময় হলেও বিনিয়োগ ও নীতিগত সহায়তা ছাড়া এর সম্ভাবনা পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন অসম্ভব।