দেশের অর্থঋণ আদালতগুলোতে জমতে থাকা মামলার পাহাড় ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির সংকেত দিচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২ লাখ ২২ হাজারের বেশি মামলায় ৪ লাখ কোটি টাকার ঋণ বছরের পর বছর ধরে আটকে আছে। এর ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলো আরও চাপে পড়ছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বোঝা বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, জুন পর্যন্ত দেশের আদালতগুলোতে ৪,০৭,৪৩৫ কোটি টাকা জড়িত ২,২২,৩৪১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সম্প্রতি বড় ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান যেমন এস আলম, বেক্সিমকো ও নাসা গ্রুপ-এর বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলো নতুন মামলা দায়ের করেছে। তবে মামলার সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও নিষ্পত্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কম, ফলে ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
শেষ তিন মাসে মামলার সংখ্যা ২,৭০৮টি বৃদ্ধি পেয়েছে, আর মামলার সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৮৬,৬৭৪ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। একই সময়ে আদালতগুলো ১১,৯৪৪টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে, যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো মাত্র ২,৯১০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। এদিকে নতুন মামলা দায়েরের সংখ্যা ছিল ১৪,৬৫২টি, যেখানে ৯৬,৯০৪ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।
ব্যাংকার এবং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক মামলায় ঋণের বড় অংশ অনিয়ম বা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। বারবার মওকুফ ও পুনঃতফসিলীকরণ প্রকল্প চালু করেও ঋণ খেলাপিদের ঋণ আদায় সম্ভব হয়নি। তারা সতর্ক করেছেন, দেশের অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম, বিচারকের ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় নথি সময়মতো না পাওয়া প্রসেসকে ধীর করছে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান বলেছেন, তাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হওয়ায় বড় ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণদাতাদের অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ধারা ১২(৩) অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারি করা, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিলের জন্য দ্রুত শুনানি আবেদন, এবং আপিল বিভাগের চেম্বার জজ-এর কাছে সিভিল মিসেলেনিয়াস পিটিশন দায়ের করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে নিষ্পত্তির পথ পরিষ্কার করা।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে অস্থির পরিস্থিতির মুখে, এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া সমস্যার মাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
























