
দেশের টেলিকম খাতে বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরেই একক আধিপত্য ধরে রেখেছে। এ অবস্থাকে অর্থনীতির ভাষায় মনোপলি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে কোনো একটি কোম্পানি পুরো বাজারে প্রভাব বিস্তার করে। যুক্তরাজ্যে কোনো কোম্পানি যদি ২৫ শতাংশ বাজার অংশীদারত্ব অর্জন করে, তাহলে সেটিকে মনোপলি হিসেবে ধরা হয়।
বাংলাদেশের টেলিকম খাতে গ্রাহক সংখ্যা, আয় ও তরঙ্গ বরাদ্দ—এ তিনটির যেকোনো একটিতে কোনো কোম্পানির ৪০ শতাংশ অংশীদারত্ব থাকলে সেটিকে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা বা এসএমপি হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সে আলোকে গ্রামীণফোনকে কয়েক বছর আগেই এসএমপি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেয়া হয় নানা বিধিনিষেধ। তাতেও টেলিযোগাযোগ খাতের তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিটির মনোপলি কমাতে পারছে না নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। বরং বাজারে একক আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে আয় ও মুনাফায় আরো স্ফীত হচ্ছে গ্রামীণফোন। অন্যদিকে অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো করে যাচ্ছে বাজারে টিকে থাকার লড়াই।
দেশে বর্তমানে চারটি মোবাইল অপারেটর—গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি টেলিটক মিলে প্রায় ১৯ কোটি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। এ খাতে মোট ব্যবসার আকার ৩২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকার, যেখানে গ্রামীণফোন লিমিটেডেরই একচ্ছত্র আধিপত্য। ২০২৪ সাল শেষে কোম্পানিটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকায়, যা দেশের মোবাইল-টেলিকম খাতের প্রায় ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে রবি আজিয়াটা একই সময় মোট আয় করেছে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি, বাংলালিংক ৫ হাজার ৯৭৮ কোটি ও টেলিটক মাত্র ৫৫২ কোটি টাকা।
গ্রামীণফোন গত বছর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করেছে ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। একই সময়ে রবি করেছে ৭০৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে রবির চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি নিট মুনাফা করেছে গ্রামীণফোন। বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিযোগিতা ও শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করে বিটিআরসি। এর আওতায় অপারেটরটির ওপর বেশকিছু বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়। তবে এসএমপি ঘোষণার অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও টেলিকম খাতের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখনো প্রায় অর্ধেক গ্রামীণফোনের নিয়ন্ত্রণেই। তাই এসএমপির কার্যকারিতার বিষয়টি মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
একক আধিপত্যকে নিয়ন্ত্রণে রেখে টেলিকম খাতের ব্যবসাকে প্রতিযোগিতামূলক করতে ২০১১ সাল থেকেই এসএমপি বিধিমালা নিয়ে কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে জারি করা হয় ‘তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা-২০১৮’। এ প্রবিধানমালার অধীনে কোনো মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা, রাজস্ব আয় কিংবা তরঙ্গ—এ তিন নির্ণায়কের যেকোনো একটিতে ৪০ শতাংশ বাজার অংশীদারত্ব থাকলেই সে অপারেটরকে এসএমপি হিসেবে ঘোষণার ক্ষমতা পায় বিটিআরসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহক সংখ্যা ও বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ বাজার অংশীদারত্ব থাকার কারণে ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে আরোপ করা হয় চারটি বিধিনিষেধ।
শর্ত আরোপের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে বিধি না মানার যে অভিযোগ, সে বিষয়ে আদালতে যায় গ্রামীণফোন। আদালত বিটিআরসিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। পরে আরোপিত বিধিনিষেধ বাতিল করা হয়। পরবর্তী সময়ে এসএমপি ঘোষিত অপারেটরের জন্য ২০টি বিধিনিষেধের একটি তালিকা করে বিটিআরসি, যা সময়ে সময়ে জারি করার কথা বলা হয়েছিল। তবে এ বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রক্রিয়া নিয়েও আদালতে যায় গ্রামীণফোন। আদালত এ প্রক্রিয়ায় দুটি সংশোধনীসহ পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বিটিআরসিকে আবারো নির্দেশনা জারি করতে বলেন। এর পর ২০২০ সালের জুনের শেষদিকে এসে তা জারি করা হয়।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে এসএমপি হিসেবে গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসির তিন ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে। এর মধ্যে নতুন কোনো সেবা বাজারে চালুর ক্ষেত্রে এমএসপি হিসেবে গ্রামীণফোনকে অনুমোদন নিতে হয় বিটিআরসির কাছ থেকে। অন্য অপারেটরদের ক্ষেত্রে অবশ্য সে বাধ্যবাধকতা নেই, শুধু এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবগত করলেই হয়। মোবাইল টার্মিনেশন রেটের (এমটিআর) ক্ষেত্রে অন্য অপারেটরদের সঙ্গে গ্রামীণফোনের ৩ পয়সার ব্যবধান রয়েছে। গ্রামীণফোনের সিম থেকে যখন অন্য অপারেটরদের সিমে কল করা হয়, তখন ইন্টারকানেকশন চার্জ হিসেবে তারা ১০ পয়সা পাবে। এর বিপরীতে অন্য অপারেটরদের সিম থেকে যখন গ্রামীণের সিমে কল করা হয়, সেক্ষেত্রে গ্রামীণফোন ৭ পয়সা চার্জ পাবে। মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটির (এমএনপি) ক্ষেত্রে অন্য অপারেটরদের তুলনায় গ্রামীণফোনের লকিং পিরিয়ড বেশি। এর ফলে অন্য অপারেটর থেকে কেউ গ্রামীণে আসতে চাইলে ৯০ দিন সময় লাগবে। এর বিপরীতে গ্রামীণফোন থেকে অন্য অপারেটরে গেলে সময় লাগবে ৬০ দিন। তাছাড়া প্রায় এক বছরের মতো গ্রামীণের নতুন সিম বিক্রিও বন্ধ করা হয়েছিল।
টেলিকম খাতে একক আধিপত্য রোধ করার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এসএমপি রেগুলেশন কার্যকর ভূমিকা রাখছে কিনা বর্তমানে সেটি মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরসি। এজন্য সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি বর্তমানে টেলিকম খাতের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে দেখছে। তবে গ্রামীণফোন, এমনকি এর প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও এসএমপি নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নের দাবি উঠেছে। এক্ষেত্রে দুই পক্ষের কাছ থেকেই মতামত নেবে বিটিআরসি।
জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু বকর সিদ্দিক গণমাধ্যম কে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি চিন্তাভাবনা করছে। এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে এবং সামনে এটি নিয়ে সভা করা হবে।’
তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে এসএমপি ঘোষণার পরও দীর্ঘ এ সময়ে দেশের টেলিকম বাজারের অংশীদারত্বে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২০২০ সালে গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে গ্রামীণফোন লিমিটেডের বাজার অংশীদারত্ব ছিল ৪৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর পরের বছর কোম্পানিটির বাজার অংশীদারত্ব ছিল ৪৬ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে পরের দুই বছর ২০২২ ও ২০২৩ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৩ শতাংশে। ২০২৪ সাল শেষে আবার অপারেটরটির বাজার অংশীদারত্ব বেড়ে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ এ বছরের জুন শেষে গ্রামীণফোনের বাজার অংশীদারত্ব আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৯১ শতাংশে।
আয়ের দিক দিয়েও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে গ্রামীণফোন। ২০২০ সাল শেষে অপারেটরটির আয়ের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। এর পরের বছরগুলোয় ধারাবাহিকভাবে তা বেড়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে ১৪ হাজার ৩০৭ কোটি, ২০২২ সালে ১৫ হাজার ৪০ কোটি এবং ২০২৩ সালে ১৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা আয় হয়েছে কোম্পানিটির। সর্বশেষ ২০২৪ সাল শেষে গ্রামীণফোনের আয় অবশ্য আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমে ১৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যম কে বলেন, ‘সঠিক প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে এমন সুপরিকল্পিত এসএমপি নীতিমালাকে সমর্থন করে গ্রামীণফোন। এ নীতিমালার মূল লক্ষ্য হলো একটি ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং বাজার ব্যর্থতা প্রতিরোধ, যাতে গ্রাহকদের সর্বোত্তম স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। এর উদ্দেশ্য কোনোভাবেই এসএমপি অপারেটরের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত করা কিংবা নাগরিকদের মানসম্মত পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা সীমিত করা নয়। এসএমপি অপারেটর হিসেবে গ্রামীণফোন সবসময়ই কঠোর নিয়ন্ত্রিত এ বাজারে আরোপিত বিধিনিষেধ মেনে চলছে। পাশাপাশি উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে গ্রাহকদের পছন্দের কানেক্টিভিটি পার্টনার হয়ে থাকার দিকে নজর দিচ্ছি আমরা।’
বর্তমান এসএমপি নীতিমালাটি পুনর্বিবেচনার জন্য বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সবার জন্য সত্যিকারের ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত হোক। সেই সঙ্গে এসএমপি অপারেটরের অগ্রগতি ও উদ্ভাবন যাতে ব্যাহত না হয়।’
দেশের টেলিকম খাতে বাজার অংশীদারত্বের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রবি আজিয়াটা পিএলসি। ২০২০ সালে অপারেটরটির বাজার অংশীদারত্ব ছিল ২৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর পরের বছর তা ২৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২২ ও ২০২৩ সালে রবির বাজার অংশীদারত্ব ছিল যথাক্রমে ৩০ দশমিক ১৯ ও ৩০ দশমিক ৭৫ শতাংশে। ২০২৪ সাল শেষে ৩০ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ এ বছরের জুন শেষে ৩০ দশমিক ৪৬ শতাংশে।
গ্রাহক সংখ্যার পাশাপাশি আয়ের দিক দিয়েও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রবি আজিয়াটা। ২০২০ সালে অপারেটরটির আয় ছিল ৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এর পরের বছরগুলোয়ও কোম্পানিটির আয়ে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ছিল। এর মধ্যে ২০২১ সালে ৮ হাজার ১৪২ কোটি, ২০২২ সালে ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি, ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৯৪২ কোটি এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকায় আয় হয়েছে রবির।
সম্প্রতি প্রতিযোগিতা কমিশনের কাছে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছে রবি আজিয়াটা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম গণমাধ্যম কে বলেন, ‘প্রতিযোগিতা কমিশনে আমাদের অবস্থান আমরা জানিয়েছি। আশা করছি কমিশন এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
গ্রাহক সংখ্যা ও আয়ের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড। ২০২০ সালে গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে অপারেটরটির বাজার অংশীদারত্ব ছিল ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর পরের বছর ২০২১ সালে বাজার অংশীদারত্ব দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে বাংলালিংকের বাজার অংশীদারত্ব ছিল যথাক্রমে ২২ দশমিক শূন্য ৯ ও ২২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৪ সালে কোম্পানিটির বাজার অংশীদারত্ব ২১ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালে বাংলালিংকের আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এর পরের তিন বছর কোম্পানিটির আয়ে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে ৪ হাজার ৭৯৪ কোটি, ২০২২ সালে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি ও ২০২৩ সালে ৬ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা আয় হয়েছিল কোম্পানিটির। তবে সর্বশেষ ২০২৪ সাল শেষে বাংলালিংকের আয় কিছুটা কমে ৫ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
রবির পাশাপাশি প্রতিযোগিতা কমিশনের কাছে সম্প্রতি বাংলালিংকের পক্ষ থেকেও গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান গণমাধ্যম কে বলেন, ‘আমরা সবসময় দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং টেলিকম শিল্পে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করি।’
দেশের টেলিকম খাতে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড। ২০২০ সালে গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির বাজার অংশীদারত্ব ছিল ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সর্বশেষ এ বছরের জুন শেষে অপারেটরটির বাজার অংশীদারত্ব দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশে। গ্রাহক সংখ্যার মতোই আয়ের দিক দিয়েও সবার চেয়ে পিছিয়ে আছে টেলিটক। ২০২০ সালে কোম্পানিটির আয় ছিল ৫৭৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৪ সাল শেষে টেলিটকের আয় দাঁড়িয়েছে ৫২৫ কোটি টাকায়।
প্রতিযোগী অপারেটরগুলো দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে বাজার আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে দেশের টেলিকম খাতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিশ্চিত করাকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ করছে। এসএমপি বিধিমালা ঘোষণার পর সেটি দ্রুত কার্যকরের জন্যও বিটিআরসিকে অনুরোধ জানিয়েছিল রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক। সম্প্রতি গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে প্রতিযোগী দুই অপারেটর রবি ও বাংলালিংক।
প্রতিযোগিতা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটির কাছে চলতি বছর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করেছে রবি ও বাংলালিংক। অভিযোগগুলো মূলত অত্যন্ত কম দামে সিম বিক্রি করা নিয়ে। অর্থাৎ গ্রামীণফোন ডাম্পিং প্রাইসে সিম বিক্রি করছে। রবির করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি এখন পর্যালোচনা করা হবে। বাংলালিংকের অভিযোগটি অতি সাম্প্রতিক সময়ে এসেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান হয়নি। পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান করা হবে কি হবে না তা নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতা কমিশন অভিযোগটি আমলে নেবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সংস্থাটির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের দাবি, টেলিযোগাযোগ বা অন্য যেকোনো খাতের প্রতিষ্ঠান নিয়ে যখন কোনো অভিযোগ আসে, তখন তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও ব্যাপক পর্যালোচনা না করে কমিশন কোনো মামলা করতে অগ্রসর হয় না। আইনের প্রবিধানমালার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন এএইচএম আহসান গণমাধ্যম কে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে একটা অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। সেখানে প্রতিযোগিতা আইনের কিছু ব্যত্যয় পাওয়া গেছে। এখন প্রতিবেদনটি আমাদের কমিশন সভায় তোলা হবে। এরপর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে যে আরো অধিকতর তদন্ত করা হবে কিনা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিচ্যুতি পাওয়া গেছে। যদি প্রকৃতভাবে ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে সেই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাবে। গ্রামীণফোন যেহেতু একটি ডমিন্যান্ট প্লেয়ার, সেই ডমিন্যান্ট পজিশন অ্যাবিউজ করার সুযোগ সব সময়ই থাকে। এখন গ্রামীণফোন অ্যাবিউজ করেছে কিনা বা করলে কতটুকু করেছে, সেগুলো অনুসন্ধান ও তদন্তের মাধ্যমে বের হয়ে আসবে। অভিযোগের যথার্থতা নিশ্চিত হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’