ঢাকা   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

পিভিসি ব্যাগের জোরে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি, চাঙা প্লাস্টিক খাত

অর্থ ও বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ৯ আগস্ট ২০২৫

পিভিসি ব্যাগের জোরে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি, চাঙা প্লাস্টিক খাত

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানিতে ইতিবাচক সূচনা করেছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক খাত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ মাসে প্লাস্টিকজাত পণ্য রফতানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এক মাস আগেও ছিল নেতিবাচক ধারায়। এক্ষেত্রে পিভিসি ব্যাগ, টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার রফতানিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি খাতটির জন্য আশাব্যঞ্জক হলেও প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে রফতানি কমে যাওয়ায় কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করেছে।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানিতে ইতিবাচক সূচনা করেছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক খাত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ মাসে প্লাস্টিকজাত পণ্য রফতানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এক মাস আগেও ছিল নেতিবাচক ধারায়। এক্ষেত্রে পিভিসি ব্যাগ, টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার রফতানিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি খাতটির জন্য আশাব্যঞ্জক হলেও প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে রফতানি কমে যাওয়ায় কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করেছে।

টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার খাতেও প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। জুলাইয়ে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে গৃহস্থালি পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। নগরায়ণ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গৃহস্থালি পণ্যের ডিজাইন, রঙ ও প্যাকেজিংয়ে উদ্ভাবন বিদেশী ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়িয়েছে।

অবশ্য প্লাস্টিক বর্জ্য খাতের চিত্র ভিন্ন। জুলাইয়ে এ খাত থেকে আয় দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ কম। পরিবেশগত নীতিমালা, বর্জ্য আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ এবং ক্রেতা দেশগুলোর নিজস্ব পুনর্ব্যবহার ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে এ খাতে অর্ডার কমেছে।

ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাইয়ে পিভিসি পাইপ রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার। এতে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ৫২ দশমিক ৫১ শতাংশ, জুলাইয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য রফতানি হয়েছে দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার, যা ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ কম। টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যারে জুলাইয়ে রফতানি হয় ৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাটাগরিতে জুলাইয়ে ১১ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার। যেখানে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্পে তিন শতাধিক কোম্পানি রফতানিতে জড়িত, যার বড় অংশ পিভিসি ব্যাগ, প্যাকেজিং সামগ্রী, টেবিলওয়্যার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লাস্টিক উৎপাদন করে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করছেন, যদিও প্রতিযোগিতা ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে তাদের জন্য টিকে থাকা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা ধরে রাখতে হলে শুধু সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভর না করে উচ্চমূল্যের, নান্দনিক ডিজাইনের এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতারা সরবরাহকারীর কাছ থেকে কার্বন ফুটপ্রিন্ট হিসাব, টেকসই উৎপাদনের সনদ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিংয়ের নিশ্চয়তা চাইছেন।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্লাস্টিক খাতের জন্য করা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হয়নি। তারা বলছেন, প্লাস্টিক খেলনা শিল্প উদীয়মান খাত। এখানে অনেক কর্মসংস্থান হচ্ছে। অথচ সব মিলিয়ে এ খাতে ৮৭ শতাংশের বেশি শুল্ক-কর রয়েছে। এছাড়া এখনো প্লাস্টিক শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। এসব কাঁচামালের আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের বিকাশে এটি কমানো জরুরি। বস্ত্র ও পোশাকসহ কয়েকটি রফতানিমুখী শিল্প খাতে যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ ইত্যাদি আমদানিতে মূসক, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা পাচ্ছে।

দেশে ছয়-সাত হাজার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানির উচ্চমূল্যের পাশাপাশি সরবরাহ সংকট ও ব্যাংকের উচ্চ সুদহারের গত দেড় বছরে প্রায় ২০ শতাংশ; অর্থাৎ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধের পথে রয়েছে।