
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দফায় ৩৭ শতাংশ এবং পরে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। অনেক আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রপ্তানি আদেশ স্থগিত, বাতিল বা অর্ডারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
তবে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করার পর, কিছু ক্রেতা আগের আদেশগুলো আবার চালু করতে শুরু করেছেন।
শুল্ক হ্রাসের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে এখনো রপ্তানিকারকরা বড় আকারে সাড়া না পেলেও তারা আশাবাদী, ছুটি শেষে নতুন ও স্থগিত আদেশ উভয়ই আবার বাড়তে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো যৌথ বিবৃতি বা বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় রপ্তানিকারকরা কিছুটা অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। চুক্তির শর্তাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে দ্বিধায় রয়েছেন অনেকেই।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, চুক্তিতে কী রয়েছে তা স্পষ্টভাবে জানা গেলে আলোচনা সহজ হতো। তিনি আরও বলেন, নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট (এনডিএ) সইয়ের কারণে কিছু বিষয় গোপন থাকতে পারে।
ঢাকাভিত্তিক মার্কিন বায়িং হাউস লিয়াং ফ্যাশন লিমিটেডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শুল্ক হ্রাসের দিনই একটি মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৭৬ হাজার ৬০০ পিস লং প্যান্ট ও শর্টসের আগের রপ্তানি আদেশ আবার কার্যকর করার নির্দেশ দেয়। এই আদেশ বাড়িয়ে দেড় লাখ পিস পর্যন্ত হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত পেয়েছেন। তিনটি কারখানায় এর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, তাদের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যের ৩ লাখ পিস পোশাকের আদেশ পুনরায় কার্যকর করতে বলেছে। শুল্ক বাড়ার সময় এই আদেশ স্থগিত করা হয়েছিল।
প্যাসিফিক সোয়েটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদ জানান, একটি বড় মার্কিন ব্র্যান্ডের ৬০ হাজার পিস টি-শার্টের কাজ চলছিল, যা নতুন শুল্ক ঘোষণার পর বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তিনি মনে করেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে তাৎক্ষণিক বড় প্রতিক্রিয়া না মিললেও মাসের শেষ দিকে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি আদেশ আসতে পারে।
এর আগে গত জুনে এনডিএ সইয়ের পর বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি, উৎসবিধি, এবং জাতীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত বিষয়াবলি। এতে চীন থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
রপ্তানিকারকরা আশাবাদী, যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি শেষে এবং বাণিজ্য আলোচনা আরও পরিস্কার হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানির গতি আবার জোরালো হবে।