ঢাকা   সোমবার ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

শুধু বাতব্যথা নয়, ইউরিক অ্যাসিড ডেকে আনতে পারে হার্ট অ্যাটাক

শুধু বাতব্যথা নয়, ইউরিক অ্যাসিড ডেকে আনতে পারে হার্ট অ্যাটাক

অনেক বছর ধরে ইউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে গেঁটে বাতের সম্পর্ক আছে বলে জানি আমরা। বিশেষ করে হাতের বুড়ো আঙুল ও পায়ে তীব্র ব্যথা হয় এর ফলে। ইদানীং বিজ্ঞানীরা ইউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে হৃদ্‌যন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।

ইউরিক অ্যাসিড মূলত পিউরিন বিপাকের একটি উপজাত। পিউরিন থাকে বিশেষত মাংস এবং কিছু সামুদ্রিক খাবারে। মানবদেহ যখন পিউরিন হজম করে, তখন তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড।

কিডনি দেহের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেয়। আর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা যখন বেশি হয়, তখন তাকে বলে হাইপারইউরিসেমিয়া। আর এ কারণে দেখা দেয় প্রদাহ।

ইউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক
গবেষকেরা পর্যবেক্ষণে দেখছেন, উচ্চমাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের কারণে রক্তনালিতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি হয়। তখন অনেকটা নীরবেই ধমনির ভেতরের আস্তরণ এন্ডোথেলিয়াম হয় ক্ষতিগ্রস্ত। এ থেকে ভবিষ্যতে হৃদ্‌রোগের শঙ্কাও দেখা দেয়। তাই ইউরিক অ্যাসিডকে এখন আর কেবল বাতব্যথার কারণ হিসেবে দেখেন না বিজ্ঞানীরা। নীরবে হৃদ্‌যন্ত্রকে দুর্বল করে দিতে পারে ইউরিক অ্যাসিড।

গবেষকেরা বলছেন, যাঁদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিড অনেক বেশি, তাঁদের হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের মতো হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বেশি। উচ্চমাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের কারণে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিড বেশি হলে যা হয়
ইউরিক অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য। এর প্রভাবে মাইক্রোভাস্কুলার রোগ তৈরি হতে পারে। এর প্রভাবে ছোট রক্তনালি অনমনীয় বা সংকীর্ণ হয়ে যায়।

সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, এ ধরনের সমস্যা কোনো স্ক্যান বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা–নিরীক্ষায় ধরা পড়ে না। আর এতে হৃদ্‌যন্ত্রে অক্সিজেনের অভাব তৈরি হয়। ফলে তখন কোনো সংকেত বা লক্ষণ ছাড়াই হুট করে হয় হার্ট অ্যাটাক। ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে একজন ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টে সুস্থ মনে হলেও হৃদ্‌রোগের শঙ্কা থেকে যায়।

ইউরিক অ্যাসিডের কারণে স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়তে পারে এবং বিপাক হতে পারে ব্যাহত।

ইউরিক অ্যাসিডের কারণে মেটাবলিক সিনড্রোম
ইউরিক অ্যাসিডের কারণে মেটাবলিক বা বিপাকীয় সিনড্রোম দেখা দেয়। বিপাকীয় সিনড্রোমকে সমস্যাগুচ্ছ বলা চলে। মেটাবলিক সমস্যায় রক্তে শর্করা, পেটে চর্বি এবং রক্তচাপ বাড়ে; শরীরে কোলেস্টেরল জমে অস্বাভাবিক মাত্রায়। একসময় মনে করা হতো, মেটাবলিক সমস্যা ইউরিক অ্যাসিডকে প্রভাবিত করে। এখন বলা হচ্ছে, মেটাবলিক সমস্যার জন্য দায়ী ইউরিক অ্যাসিড।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনির রোগ গবেষক রিচার্ড জনসন জানান, ইউরিক অ্যাসিড ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে। এর ফলে বিপাকীয় সিনড্রোম দেখা দেয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার আগেই বা ওজন বাড়ার আগে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের প্রভাব দেখা যায়। শরীরের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সাধারণ শক্তি সঞ্চয়ের পদ্ধতিতে ফেলে ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব।

যেসব কারণে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে
নিয়মিত রেড মিট বা লাল মাংস এবং চিনিযুক্ত পানীয় খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে।

হালকা ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতাও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে উষ্ণ আবহাওয়ায় বা ব্যায়ামের পর এমন ডিহাইড্রেশন দেখা যায়।

ক্ষুধার্ত অবস্থায় শরীরে দ্রুত টিস্যু ভেঙে যায়, তখন বেশি বেশি পিউরিন ও ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়।

প্যাকেটজাত অনেক খাবারে উচ্চ ফ্রুক্টোজযুক্ত কর্ন সিরাপ থাকে। এ ধরনের খাবার ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।

সচেতনতার জন্য যা করতে পারেন
ইউরিক অ্যাসিড শুধু খাদ্যাভ্যাসের বিষয় নয় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এটি মানবদেহ ও মনের ওপর চাপ, ঘুমের অভ্যাস ও শরীরে পানির ভারসাম্যের ওপর নির্ভরশীল।

দিনের শুরুতেই হাইড্রেশন থেরাপি হিসেবে সাধারণ পানি খেয়ে দিন শুরু করুন। কিডনিকে ইউরিক অ্যাসিড পরিষ্কার করার জন্য সকালে পানি খাওয়া খুব ভালো অভ্যাস।

যেকোনো খাবারের পরে একটু হাঁটার অভ্যাস করুন। বিশেষ করে রাতের খাবারের পরে হাঁটুন নিয়মিত। এতে ইউরিক অ্যাসিডের নিয়ন্ত্রণ ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত হয়।

ম্যাগনেশিয়াম–সমৃদ্ধ খাবার খান বেশি বেশি। বাদাম, বিভিন্ন ধরনের বীজ, টক দইয়ের মতো খাবার শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ডাবের পানি বা কলার মতো পটাশিয়াম–সমৃদ্ধ পানীয় পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত খান।

ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে লবণ খান মেপে মেপে। অতিমাত্রায় সোডিয়াম শরীরের ইউরিক অ্যাসিড ধারণক্ষমতা বাড়ায়।

ইউরিক অ্যাসিড সংক্রান্ত সমস্যা কাটাতে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া বা ঘুমানোর আগে ১০ মিনিটের ধ্যান করতে পারেন। গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত ধ্যান করার অভ্যাস থাকলে ইউরিক অ্যাসিডের চাপ সৃষ্টিকারী স্পাইক কমে।

সূত্র: হেলথলাইন