ঢাকা   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

শিল্পে উৎপাদন বাড়লেও কমছে চাকরি: প্রবৃদ্ধির লাভ কোথায়?

শিল্পে উৎপাদন বাড়লেও কমছে চাকরি: প্রবৃদ্ধির লাভ কোথায়?

কারখানার সংখ্যা ও উৎপাদন বেড়েছে, তবু কর্মসংস্থানের জায়গায় ধস; প্রযুক্তিনির্ভরতা ও দক্ষতা সংকটকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশজুড়ে শিল্প খাতে উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়ছে, স্থাপিত হচ্ছে আধুনিক কারখানা। অথচ এর সুফল মিলছে না চাকরির বাজারে। বরং গত এক দশকে দেশে কর্মসংস্থান কিছুটা কমেই গেছে। অর্থনীতিবিদরা এই পরিস্থিতিকে বলছেন—"কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি", যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতরে এক অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে দেশে শিল্পখাতে কাজ করতেন প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ মানুষ, যা ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখে। অথচ এই সময়েই শিল্প খাতের জিডিপিতে অবদান বেড়ে হয়েছে ৩৪.৮১%, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২৭.৫৫%। বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে মূলত দায়ী অটোমেশন, দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি এবং বড় শিল্পের প্রযুক্তিনির্ভরতা

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, বড় শিল্পকারখানাগুলো এখন উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর। ফলে উৎপাদন বাড়লেও শ্রমিকের প্রয়োজন কমছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “যখন আমরা ১০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করতাম, তখন যে পরিমাণ শ্রমিক ছিল, এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করেও সেই তুলনায় কম শ্রমিক কাজ করছে।”

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ বলেন, “শুধু জনসংখ্যা থাকলেই হবে না। আমাদের দরকার আধা দক্ষ ও কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী। অথচ এই জায়গাতেই আমাদের ঘাটতি প্রকট।”

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর সাবেক উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম বিষয়টিকে হতাশাজনক উল্লেখ করে বলেন, “শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে তা কমছে। কৃষিতে বরং শ্রমিক বাড়ছে, যা অর্থনৈতিক কাঠামোর ভারসাম্য নষ্ট করছে।” তিনি আরও বলেন, “সেবা খাত কখনোই শিল্প খাতের বিকল্প হতে পারে না। সেবার অনেক চাকরি নিম্ন বেতনের ও কম উৎপাদনশীল।”

শ্রম অর্থনীতিবিদ নাজমুল হোসেন আভি এই প্রবণতাকে অর্থনৈতিক বিচ্যুতি হিসেবে দেখছেন। তার মতে, শিল্প উৎপাদনে বৈচিত্র্য না থাকায় কর্মসংস্থান বাড়ছে না। দক্ষতা উন্নয়নকে তিনি সমস্যার মূল জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

র‍্যাপিড-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, “শিক্ষা ও শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে যোগসূত্র নেই। তাই বিদেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশের সম্ভাব্য চাকরির জায়গাগুলো দখল করে নিচ্ছে।” তিনি মনে করেন, বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং সুদের উচ্চহারও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সবশেষে রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, “বিশেষ করে নারীরা যেহেতু পোশাকশিল্পে বেশি কাজ করতেন, সেখানে চাকরি কমে যাওয়া নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য অশুভ ইঙ্গিত।”