ঢাকা   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

৬ ইসলামি ব্যাংকের ছদ্মবেশ ফাঁস: লুকানো খেলাপি ঋণ চারগুণ বেশি

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২২ জুলাই ২০২৫

৬ ইসলামি ব্যাংকের ছদ্মবেশ ফাঁস: লুকানো খেলাপি ঋণ চারগুণ বেশি

ফরেনসিক অডিটে চাঞ্চল্যকর তথ্য; অনিয়ম-প্রতারণায় জর্জরিত ব্যাংকগুলো মার্জারের পথে, অস্থিরতা আমানতকারীদের মধ্যেও বাংলাদেশের ছয়টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্র চমকে দিয়েছে সকলকে। আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি ও আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং পরিচালিত ফরেনসিক রিভিউয়ে দেখা গেছে, এসব ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ বা এনপিএল তাদের ঘোষিত অঙ্কের তুলনায় চারগুণ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে এনপিএল যেখানে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বলা হয়েছিল, সেখানে আসল অঙ্ক ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

এই তালিকায় রয়েছে—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, আইসিবি ইসলামী এবং এক্সিম ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ব্যাংক বছরের পর বছর নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এসেছে। অনিয়মে সবচেয়ে এগিয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, যাদের প্রকৃত খেলাপি হার ৯৫ শতাংশের বেশি।

অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) অনুসারে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ছয় ব্যাংকের সম্মিলিত প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়ায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকায়। এছাড়া আমানতের তুলনায় অতিরিক্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যালান্স শিটে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে।

চরম অনিয়ম আর বিপর্যস্ত আর্থিক চিত্র সামনে আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংক রেজ্যুলুশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’-এর আওতায় এই ব্যাংকগুলো একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও বিদেশি অংশীদার থাকার কারণে আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে এই পরিকল্পনার বাইরে রাখা হয়েছে।

তবে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া এখনো ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে। এক্সিম ব্যাংক বলছে, তারা তুলনামূলকভাবে আর্থিকভাবে বেশি স্থিতিশীল। অন্যদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দাবি করছে, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য গঠিত 'ব্যাংক রিস্ট্রাকচারিং অ্যান্ড রেজোলিউশন ইউনিট' পুরো প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছে। তবে অভিজ্ঞতার অভাবে কাজের গতি এখনও ধীর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম ঠেকাতে কড়া নজরদারি চালু রাখা।

ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, “এখন সময় খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার, নয়তো পুরো ব্যাংকিং খাত আরও গভীর সংকটে পড়বে।”

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই প্রতিবেদন একটি চরম আর্থিক অনিয়মের ইঙ্গিত বহন করে। ভবিষ্যতে আমানতকারীদের নিরাপত্তা এবং ব্যাংক ব্যবস্থার টেকসইতার স্বার্থে, সময়োপযোগী সংস্কার ও দায়িত্বশীল পরিচালন ব্যাবস্থা অত্যাবশ্যক।