ঢাকা   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

১০ দিনেই গুগল পে–এর গ্রাহক ২৫ হাজার, বাড়ছে জনপ্রিয়তা

অর্থ ও বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৬ জুলাই ২০২৫

১০ দিনেই গুগল পে–এর গ্রাহক ২৫ হাজার, বাড়ছে জনপ্রিয়তা

বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গুগলের ডিজিটাল লেনদেন সেবা গুগল ওয়ালেট। এই সেবা সাধারণভাবে ‘গুগল পে’ নামে পরিচিত। গত ১০ দিনে প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক এই সেবার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। দেশে গত ২৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এই সেবাটি চালু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গুগল, মাস্টারকার্ড ও ভিসার সহযোগিতায় দেশের বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক এই ডিজিটাল লেনদেন সেবাটি চালু করেছে। ফলে শুধু সিটি ব্যাংকের গ্রাহকেরাই এখন এ সেবাটি পাচ্ছেন।

এখন বাংলাদেশের গ্রাহকেরাও গুগল পের মাধ্যমে সহজে ডিজিটাল লেনদেন করতে পারছেন। এ জন্য গ্রাহকদের আলাদাভাবে ব্যাংকের প্লাস্টিক কার্ড (ডেবিট ও ক্রেডিট) ব্যবহার করতে হচ্ছে না। হাতে থাকা স্মার্টফোনই হয়ে উঠছে ডিজিটাল ওয়ালেট। সহজে করা যাচ্ছে কেনাকাটা। ফলে দেশেও দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে সেবাটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে গুগল পে সেবা চালু আছে।

গুগল পে যেহেতু সিটি ব্যাংক চালু করেছে, তাই আপাতত সিটি ব্যাংকের মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ডধারীরা গুগল পে নিবন্ধিত হয়ে সেবাটি ব্যবহার করতে পারছেন।

সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অরূপ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা প্রতিনিয়ত গুগল পেতে নিবন্ধন করছেন। ফলে কার্ড ছাড়াই মুঠোফোন দিয়ে সব লেনদেন করা যাচ্ছে, যা কার্ড বহনের ঝামেলা থেকে গ্রাহকদের মুক্তি দিচ্ছে। লেনদেনে আরও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে এসেছে। আশা করছি, দ্রুত এই সেবা আরও ছড়িয়ে পড়বে।’

গুগল পে–তে লেনদেন কেমন

সিটি ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের গ্রাহকদের যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে গুগল পে অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। সেই ফোনে এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) প্রযুক্তি থাকতে হবে। সাধারণত বেশির ভাগ স্মার্টফোনে এই প্রযুক্তি থাকে।

অ্যাপ ডাউনলোডের পর তাতে ‘অ্যাড পেমেন্ট মেথড’ অপশনে গিয়ে ভিসা বা মাস্টারকার্ড যুক্ত করতে হবে। মুঠোফোন দিয়ে ছবি তুলে বা কার্ডের তথ্য লিখে অ্যাপে কার্ড সংযুক্ত করা যায়। সিটি ব্যাংক জানিয়েছে, দোকান বা সেবা বিক্রির প্রতিষ্ঠানে কার্ডে লেনদেনের জন্য যন্ত্র থাকে, যা ‘পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস)’ যন্ত্র নামে পরিচিত। এনএফসি প্রযুক্তি–সংবলিত পিওএস যন্ত্রে গুগল পে ব্যবহার করে সহজেই লেনদেন করা যাবে। স্বল্প পরিমাণ বা ৫ হাজার টাকার মধ্যে লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহককে গোপন নম্বর (পাসওয়ার্ড) দিতে হবে না। তবে বড় অঙ্কের লেনদেনে পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এ লেনদেন ব্যবস্থায় মুঠোফোন বের করে ‘স্ক্রিন লক’ খুলে পিওএস যন্ত্রের কাছে নিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেন হয়ে যাবে।

গত ২৪ জুন আনুষ্ঠানকিভাবে চালু হওয়ায় পর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই সেবায় নিবন্ধন করেছে সিটি ব্যাংকের ২৪ হাজার ৫১৩ গ্রাহক। চালুর পর থেকে লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৩০০টি। এর মধ্যে শুধু বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪২১টি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ৭২ লাখ টাকার।

কারা নিবন্ধিত হচ্ছেন, লেনদেন কোথায়

সিটি ব্যাংকের ভিসা, মাস্টারকার্ড ও অ্যামেক্স (আমেরিকান এক্সপ্রেস)—এই তিন ব্র্যান্ডের কার্ড রয়েছে। ব্যাংকটিতে ডেবিট কার্ড রয়েছে ১২ লাখ ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে সাড়ে ৪ লাখ। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ ভিসা ও মাস্টারকার্ডের। এসব কার্ডধারীরা গুগল পে–তে লেনদেন করতে পারবেন। সিটি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই অ্যামেক্স কার্ডধারীদের এই সেবায় যুক্ত করার কাজ চলছে।

সারা দেশে সিটি ব্যাংকের ৩৫ হাজার পিওএস রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ হাজার পিওএস যন্ত্রে এনএফসির মাধ্যমে লেনদেন করা যায়। এ ছাড়া অন্য ব্যাংকের দেওয়া পিওএস যন্ত্রেও গুগল পের মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে। গুগল পে ব্যবহার করে লেনদেন করতে গ্রাহকের বাড়তি কোনো খরচ হবে না। যেসব গ্রাহকের কার্ডে অনুমতি রয়েছে, তাঁরা গুগল পের মাধ্যমে বিদেশে ডলারেও মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক জানিয়েছে, গুগল পেতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত ‘এনক্রিপশন’ প্রযুক্তি, যা গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

মিরপুরের বিসমিল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে সিটি ব্যাংকের পিওএস যন্ত্র রয়েছে, যা এনএফসি যুক্ত। বিমমিল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরের কর্মচারী রেদওয়ান আহমেদ বলেন, আগের মতোই গ্রাহকেরা স্বচ্ছন্দে লেনদেন করতে পারছেন। এখন কার্ড ছাড়া মোবাইলে লেনদেন করা যাচ্ছে। এই ডিজিটাল লেনদেন খুচরা ও নগদ লেনদেনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে।