ঢাকা   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

বিমার টাকা পেতে বছরের পর বছর ধরনা! জীবনবিমা খাতে আটকে আছে গ্রাহকের ৪ হাজার কোটি টাকা

বিমার টাকা পেতে বছরের পর বছর ধরনা! জীবনবিমা খাতে আটকে আছে গ্রাহকের ৪ হাজার কোটি টাকা

জীবনবিমা করিয়ে নির্ভরতার স্বপ্ন দেখেছিলেন যারা, তারা এখন বছরের পর বছর ঘুরছেন দাবিকৃত অর্থ পেতে—এ যেন দেশের জীবনবিমা খাতের চিরচেনা দৃশ্য। আইডিআরএ-এর (বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য—৩২টি জীবনবিমা কোম্পানির কাছে আটকে আছে গ্রাহকের ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার বেশি দাবি।

বিমার মেয়াদ শেষে যথাযথ কাগজপত্র জমা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তির আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। অনেকে এক দশকের বেশি সময় ধরে ঘুরেও প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছেন না। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বকেয়া দাবি ছিল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, যা মাত্র তিন মাসে বেড়ে ৪ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আর্থিক অনিয়ম, সম্পদ লোপাট এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনা।

সবচেয়ে দুরবস্থায় রয়েছে পাঁচটি জীবনবিমা কোম্পানি। সানফ্লাওয়ার লাইফ ইনস্যুরেন্স একাই আটকে রেখেছে ৫৯৯ কোটি টাকা, যার প্রায় ৯৮ শতাংশ দাবি অনিষ্পন্ন। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ঝুলে আছে প্রায় ২ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা, পদ্মা ইসলামী লাইফের ২৬১ কোটি, বায়রা লাইফের ৮৩ কোটি ও প্রগ্রেসিভ লাইফের ২০১ কোটি টাকা।

এই দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের কারণে মানুষের বিমার ওপর আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় বিমা খাত জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখলেও এখন তা নেমে এসেছে ০.৪৫ শতাংশে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই ধারা চলতে থাকলে পুরো খাত মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

তবে সব কোম্পানির চিত্র একরকম নয়। পপুলার লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামী, চার্টার্ড, সোনালী, মার্কেন্টাইল, সন্ধানী, মেঘনা ও রূপালী লাইফ—এই প্রতিষ্ঠানগুলো ৯৯ শতাংশের বেশি দাবি পরিশোধ করে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

আইডিআরএ জানিয়েছে, অনিয়মকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং দাবি পরিশোধে তাদের সম্পদ বিক্রি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে হলে জীবনবিমা খাতে চাই শক্ত নিয়ন্ত্রক ভূমিকা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা। তা না হলে বিমা খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরবে না, বরং আরও সংকটে পড়বে পুরো খাত।