ঢাকা   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

মেহেরপুরে দাম না থাকায় কাঁঠাল এখন গবাদিপশুর খাদ‍্য

মেহেরপুরে দাম না থাকায় কাঁঠাল এখন গবাদিপশুর খাদ‍্য

কৃষি নির্ভর মেহেরপুরে জাতীয় রসালো ফল কাঁঠাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন  চাষিরা। এবারে কাঠালের ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম না থাকায় গাছেই পেকে নষ্ট হচ্ছে। এ ফল ব‍্যাবহৃত হচ্ছে গবাদিপশুর খাদ‍্য হিসেবে।

কৃষি বিভাগ বলছে স্থানীয়ভাবে বাজার সৃষ্টি করা গেলে এই সমস্য থাকবে না।জেলার গ্রাম অঞ্চলের সড়কের দুপাশসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁঠাল বাগানের প্রতিটি গাছেই ঝুলে আছে বড় বড় কাঠাল। স্থানীয়ভাবে বাজার না থাকায় এসব কাঁঠাল বিক্রি করতে পারছে না চাষিরা। চাহিদা না থাকাকে পুজি করে ভ্রাম্যমাণ কাঠাল ব্যবসায়ীরা কম দামে চাষিদের কাছ থেকে কিনছে এসব ছোট-বড় কাঁঠাল।

স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা যায়, একটি ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের বড় আকারের প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। অনেকে দাম না পেয়ে কাঁঠাল কেটে গরু ছাগলের খাবার হিসেবে দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, গত বছর যে কাঁঠাল ৮০ থেকে ৯০ টাকায় কিনেছে, সেই কাঁঠাল এবার কিনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। তাও বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ‍্য মতে জেলায় ১৬৫ হেক্টর জমির কাঁঠাল বাগান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন।

জামাল হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ির উঠানে থাকা একটি গাছে শতাধিক কাঁঠাল ধরেছিল। যার মধ‍্যে আমি সাতটা কাঁঠাল শুরুর দিকে বিক্রি করেছিলাম ২৫০ টাকা করে। আর বতর্মানে প্রতিটি কাঁঠালের দাম দিতে চাইছে ১৫ টাকা করে। তাই বিক্রি না করে কাঁঠাল কেটে গরুর নাইন্দে খাদ‍্য হিসেবে দিচ্ছি। এই দামে কাঁঠাল বেচে পড়তা হয় না।’

আরেক বাগানি আমজাদ হোসেন বলেন, গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। গাছের কাছে ব্যাপারী গেলে ঘুরে আসছে। নেওয়ার লোক নেই, ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের কাঁঠাল দাম বলছে কম। এখন গাছেই কাঁঠাল পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ইউপি সদস‍্য শাহিন আহমেদ বলেন, ‘এত বড় বড় কাঁঠাল গাছে পেকে পড়ে নষ্ট হচ্ছে, তাই গরুকে খাওয়াচ্ছি। নেওয়ার লোক নেই, ২০ টাকা ৩০ টাকা দাম বলছে। এখন কি হবে নষ্ট হচ্ছে পচে। অথচ এই কাঠাল এমন একটি ফল যার পাতা থেকে শুরু করে সবকিছুর ব‍্যাবহার হয়। তাছাড়া একটি সময় ছিলো প্রতিটি বাড়িতেই কাঠাল গাছ ছিলো। বতর্মানে তেমনটির আর দেখা মিলছে না। বরং এখন কাঠাল বাগান কেটে ফেলা হচ্ছে।’

বিধবা রওশনারা বলেন, বাগানে কাঁঠাল পড়ে আছে নেওয়ার লোক নেই। গরু ছাগলে খাচ্ছে, মানুষ খাচ্ছে না। পাকা কাঁঠাল পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

কাঠাল বিক্রেতা রইচ উদ্দিন বলেন, ‘গতবার যে কাঁঠাল ৮০ থেকে ৯০ টাকায় কিনেছি সেই কাঠাল এবারে কিনছি ২০ টাকা করে। আর আমাদের খরচ যোগ হচ্ছে ১০ টাকা। অথচ সেই কাঁঠাল হাটে বিক্রি করতে গেলে ২০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না। আবার কিছু বাগান মালিক আছে কম দামে কাঁঠাল বিক্রি না করে ঘাসের বিকল্প হিসেবে গরু ছাগলকে খেতে দিচ্ছে। আমরা যে ১০ টাকা লাভ করবো তা করতে পারছিন না। বাগান থেকে ঘুরতে হচ্ছে ওখানে বেচতে পারছি না।’

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সামসুল আলম বলেন, মেহেরপুর জেলায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল বাগান আছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন। যে পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে সে পরিমাণ চাহিদা নেই। মেহেরপুরে বাজার না থাকার কারণে কাঁঠাল বিপণন করতে সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি বিপণন কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং ডিসির সাথে কথা বলেছি। এখানে স্থানীয়ভাবে বাজার করা যায় কিনা। যদি করা যায় তাহলে সমস্যা থাকবে না। আমরা কৃষদের পরামর্শ দেব, দেশের যে এলাকায় কাঁঠালের চাহিদা আছে সেখানে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হবে।