
নেত্রকোণার সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দায় নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধদিবস। শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গার্ড অব অনার, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী নাজিরপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে সাত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হোন।
শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- নেত্রকোণার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল আজিজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইয়ার মামুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ চন্দ্র দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস ও জামালপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জামাল উদ্দিন। নাজিরপুরের অদূরে ভারত সীমান্তসংলগ্ন লেঙ্গুরা এলাকায় তাদের সমাহিত করা হয়। নেত্রকোণাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রতিবছর দিনটিকে ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধদিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।
ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধের ইতিহাস:
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে কলমাকান্দা থানার নাজিরপুর বাজারে অবস্থান নেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আরও কয়েকটি গ্রুপ বাজারের চারপাশের বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান নেয়। সারারাত অপেক্ষা করেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী না আসায় পরদিন অর্থাৎ ২৬ শে জুলাই তারা এমবুশ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পে ফেরার সময় নাজিরপুর ভূমি তফসিল অফিসের সামনে আসতেই দক্ষিন-পূর্ব দিক দিয়ে কলমাকান্দা ক্যাম্প হতে নদীপথে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এই যুদ্ধে শহীদ হোন বাংলার সাত দামাল সন্তান। তারা হলেন- শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়ার মামুদ, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ চন্দ্র দাস, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা দ্বীজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন। এছাড়া এই দিন মর্টারের গুলিতে গৌরীপুর গ্রামে আরও ৩ জন শহীদ হন। শহীদ ৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ২৭ শে জুলাই লেংগুরার ফুলবাড়ি নামক গ্রামে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে (১১৭২নং পিলার সংলগ্ন) বাংলাদেশের মাটিতে সমাহিত ও দাহ করা হয় যা পরবর্তীতে সাত শহীদের মাজার বা সপ্তশিখা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর ২৬শে জুলাই সেখানে শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক নাজিরপুর দিবস। উল্লেখ্য বৃহত্তর ময়মনসিংহের টাইগার খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক তাঁরা মিয়া'র নেতৃত্বে নাজিরপুর যুদ্ধ পারিচালিত হয়।
আজ শনিবার দুপুরের দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের জেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী জানান, ১৯৮৪ সাল থেকে ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধদিবসটি পালন করে আসছি। সকালে ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধদিবস উপলক্ষে নেত্রকোণা জেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিল ও জেলার প্রতিটি উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক নেতৃবৃন্দ সহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ আমার নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সুখময় সরকার, কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত, কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
পরে শহীদদের গার্ড অব অনার প্রদান শেষে তাদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সর্বসাধারণ অংশ নেন।
দিবসটি উপলক্ষে লেংগুরা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।