
সরকার ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’-এর জন্য কৌশলগত অংশীদার খুঁজছে, যারা মালিকানায় যুক্ত হয়ে নতুন বিনিয়োগ করে নগদকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে। এই লেনদেনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি অভিজ্ঞ আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে। নগদের আর্থিক মূল্য নির্ধারণের পর বিনিয়োগকারী খুঁজবে বিডা।
এ নিয়ে বিডা গত ৩১ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আগ্রহপত্র আহ্বান করেছে। এতে টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) প্রকাশ করা হয়েছে। এতে নগদের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি উল্লেখ করে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিডা কার্যালয়ে দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিডার প্রকাশিত টিওআর অনুযায়ী, নগদ বর্তমানে ডাক বিভাগের অধীনে পরিচালিত হলেও গত চার বছরে এটির ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য নতুন প্রযুক্তি কেনা প্রয়োজন, যা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ও পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দরকার। সরকারের ডাক বিভাগ আশা করছে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে কৌশলগত অংশীদার আনা হলে তা দেশের জন্য লাভজনক হবে এবং নিজস্ব বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমবে। টিওআরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে সরকার নগদের বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রির জন্য একজন কৌশলগত অংশীদার খুঁজছে।
ডাক বিভাগের একটি সূত্র গণমাধ্যম কে জানায়, গত সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক সভায় নগদকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই ডাক বিভাগ থেকে বিডার কাছে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর প্রক্রিয়াটি সম্পন্নের জন্য আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, নগদকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিষ্ঠানটির জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অবশ্য এর আগেই নগদের উদ্যোক্তাসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিই পালিয়ে যান। প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর নিরীক্ষায় নগদে বড় ধরনের জালিয়াতির তথ্য উঠে আসে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করেছে। এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে। এ ঘটনায় ২৪ জনকে আসামি করে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করেছে।
আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ কী হবে
নিয়োগপ্রাপ্ত আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি পুরো বিক্রয়ের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করবে। তাদের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে থাকবে নগদের বাজারমূল্য নির্ধারণ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিতে নগদের সঠিক মূল্যায়ন করে বিক্রয়ের জন্য তারা একটি কার্যকর কৌশল প্রণয়ন, বিনিয়োগকারী খুঁজতে দেশি ও বিদেশি সম্ভাব্য কৌশলগত এবং আর্থিক বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। তারা শেয়ারহোল্ডিং–ব্যবস্থা ও লেনদেনের সর্বোত্তম কাঠামো নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি মূল বাণিজ্যিক ও আর্থিক শর্তাবলি নিয়ে দর-কষাকষিতে সহায়তা প্রদান এবং চুক্তি চূড়ান্ত করবে। এ ছাড়া লেনদেন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
আবেদন ও নিয়োগপ্রক্রিয়া
আগ্রহী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের প্রস্তাব জমা দিতে হবে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ফিনটেক, টেলিকম বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রভৃতি খাতে বড় আকারের কৌশলগত লেনদেন পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে তাদের চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দিতে বলা হবে। সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াটি তিন মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেন আকর্ষণীয় নগদ
নগদকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নগদের গ্রাহকসংখ্যা ৯ কোটির বেশি, যার মধ্যে নিয়মিত গ্রাহক ১ কোটির ওপরে। দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। নগদে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। সরকারের প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেশির ভাগ অর্থ বিতরণ করে থাকে নগদ। পরিচালনার খরচ বাদ দিলে বর্তমানে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে নগদ।