
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা দেশের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক — সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (SIBL), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারদর নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। গত চার কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এসব ব্যাংকের শেয়ারে ৩৬ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত দরবৃদ্ধি হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশা জাগিয়েছে।
বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম ও নজরুল ইসলাম মজুমদার–এর প্রভাবমুক্ত করতে এবং ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ জারি করে। এর আওতায় এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা অনুদান/প্যাকেজ বরাদ্দ দিয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ও সম্পদের ঘাটতির কারণে শেয়ারহোল্ডারদের কিছু না দেওয়ার প্রাথমিক ঘোষণা ছিল। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে অর্থ লোপাটের দায় শেয়ারহোল্ডারদেরই, এবং আমানত রক্ষাই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল লক্ষ্য।
এই ঘোষণার পর ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর ধসে পড়ে। কিছু শেয়ারের দাম এক টাকার কাছাকাছিও নেমে আসে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেগুলোর কোনো ক্রেতা ছিল না।
সম্প্রতি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক "শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছু ক্ষতিপূরণ বা নতুন একীভূত ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে"। এই খবরে বাজারে ইতিবাচক সাড়া দেখা যাচ্ছে।বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদি ট্রেডার ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এই সুযোগে শেয়ার কিনছেন, ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণ বা পুনঃমূল্যায়নের আশা নিয়ে।
ব্যাংকভিত্তিক শেয়ারের দরবৃদ্ধির চিত্র:
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (SIBL):গত ২৩ সেপ্টেম্বর সর্বনিম্ন দর ছিল ৩ টাকা। মাত্র ৪ দিনে ৪৭% বেড়ে ৪.৪০ টাকায় পৌঁছেছে।মঙ্গলবারই ডিএসইতে ১২.৩৫ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে, বাজারমূল্য ৫৪ লাখ টাকা।
এক্সিম ব্যাংক:আগের দর ছিল ২.৮০ টাকা → বেড়ে ৪.০০ টাকা (৪৩% বৃদ্ধি)।২০২৪ সালের আগস্টে ছিল ১১ টাকা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক:২৩ সেপ্টেম্বর দর ছিল ১.৮০ টাকা → বেড়ে ২.৬০ টাকা (৪৪% বৃদ্ধি)।এক বছর আগে ছিল ৮.৭০ টাকা।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: সর্বনিম্ন দর ১.৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১.৮০ টাকা (৩৮% বৃদ্ধি)।আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮.৩০ টাকা (২০২৪ সালের আগস্ট)।
ইউনিয়ন ব্যাংক: ২৫ সেপ্টেম্বর দর ছিল ১.৪০ টাকা → বেড়ে ১.৯০ টাকা (৩৬% বৃদ্ধি)।আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮.২০ টাকা।
এই পাঁচ ব্যাংকের অর্থনৈতিক দুরবস্থা অনেক দিনের। বিভিন্ন তদন্তে দেখা গেছে, নামে-বেনামে ঋণ বিতরণ, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে।একের পর এক ঋণ খেলাপির ফলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৪৮% থেকে ৯৮% পর্যন্ত, গড় খেলাপি ঋণ প্রায় ৭৮%, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বার্তা।
যদিও সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি বাজারে আশার সঞ্চার করেছে, তবু এটি গুজব-ভিত্তিক মন্দাবাজারে সাময়িক চাঙ্গাভাব হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কিনা বা কতটা দেওয়া হবে—তা নির্ভর করছে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও সরকারি নীতিমালার ঘোষণার অপেক্ষা করা উচিত।