
সাগরের বুকে হারিয়ে যাওয়া এক টুকরো স্বর্গ নিঝুম দ্বীপ। প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়ায় প্রশান্তি খুঁজে পেতে চাইলে নিঝুম দ্বীপ হতে পারে আপনার স্বপ্নের গন্তব্য। মেঘনার মোহনায় জেগে ওঠা এই দ্বীপের সৈকতে ঢেউয়ের গর্জন আর চিত্রা হরিণের ছুটোছুটি আপনাকে দেবে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
নিঝুম দ্বীপের অবস্থান
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ছোট্ট দ্বীপ নিঝুম দ্বীপ, যা বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। এটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। চারটি চর—চর ওসমান, বাউল্লার চর, কামলার চর ও মৌলভির চর নিয়ে গঠিত এই দ্বীপটি ১৯৪০ সালে জেগে ওঠে এবং ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়।
নামের ইতিহাস
প্রথমদিকে এর নাম ছিল চর ওসমান, যেটি এক বাথানিয়া ওসমানের নামানুসারে রাখা হয়েছিল। তবে ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর দ্বীপটি জনমানবহীন হয়ে গেলে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমিরুল ইসলাম কালাম এর নতুন নামকরণ করেন ‘নিঝুম দ্বীপ’।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
- চিত্রা হরিণের বন: একসঙ্গে এত চিত্রা হরিণ দেশের আর কোথাও দেখা যায় না।
- নামা বাজার সৈকত: সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্য উপযুক্ত স্থান।
- কবিরাজের চর ও দমার চর: শীতের অতিথি পাখির মিলনমেলা।
- ভার্জিন আইল্যান্ড: দ্বীপের সবচেয়ে সুন্দর ও নিরিবিলি সৈকত।
- কমলার দ্বীপ: তাজা ইলিশ খাওয়ার জন্য বিখ্যাত।
ভ্রমণের সেরা সময়
অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। বর্ষাকালে কাদা ও বৃষ্টির কারণে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়ে, তবে মাছের প্রাচুর্য পাওয়া যায়।
যেভাবে যাবেন
- বাসে: ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত বাস সার্ভিস আছে (ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকা)। সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট যেতে সিএনজিতে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হবে।
- লঞ্চে: সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকেল ৫:৩০ টায় লঞ্চ ছাড়ে, যা সকালে হাতিয়ার তমুরদ্দি ঘাটে পৌঁছায় (ভাড়া ৩০০-২০০০ টাকা)।
- নৌপথ: নলচিরা বা মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলার বা স্পিডবোটে নিঝুম দ্বীপ পৌঁছানো যায়।
থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা
নামার বাজার ও বন্দরটিলা এলাকায় ভালো মানের রিসোর্ট পাওয়া যায় (১৫০০-৩০০০ টাকা)। ক্যাম্পিংয়ের জন্যও নিঝুম দ্বীপ আদর্শ। খাবারের জন্য নামার বাজারের খাবার হোটেলগুলো বেশ জনপ্রিয়, যেখানে সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ির আয়োজন পাওয়া যায়।
সতর্কতা
- আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে যাত্রা করুন।
- বিদ্যুতের সমস্যা থাকায় পাওয়ার ব্যাংক ও টর্চ সঙ্গে রাখুন।
- যানবাহনের ভাড়া আগে ঠিক করে নিন।
- পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষভাবে সচেতন থাকুন।
নিঝুম দ্বীপের প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আমাদের সচেতন থাকা জরুরি। তাই ভ্রমণের সময় প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল হোন এবং নিঝুম দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
শেয়ার বিজনেস24.কম