ঢাকা   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১২ টাকা: সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ

চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১২ টাকা: সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ

সরু চালের বৃহত্তম মোকাম কুষ্টিয়ায় মিনিকেট চাল এখন ৭২-৭৪ টাকা কেজি

কুষ্টিয়ার খাজানগরে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৪ টাকা কেজি দরে। অথচ বছর শুরুর দিকে একই চাল সরকার নির্ধারিত ৬২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। চালকল মালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের মতে, বছরে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা।

কুষ্টিয়ার চালকল মালিকদের সিন্ডিকেট নিয়ে প্রশ্ন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে কুষ্টিয়ার চালকল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। দাম নিয়ন্ত্রণে চলতি বছর জানুয়ারিতে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজার উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভায় মিনিকেট চালের সর্বোচ্চ দাম ৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু ১০ মাসের ব্যবধানে বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান আবারও সভার আয়োজন করেন। মিলাররা জানান, তাদের বিক্রয়মূল্য এখন ৭০-৭২ টাকা কেজি। পরে জেলা প্রশাসনের অনুরোধে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি ঘোষণা দেয়, দাম কেজিতে এক টাকা কমানো হবে।

বাস্তবে দাম কমার বদলে আরও বেড়েছে
সমিতির ঘোষণার পাঁচ দিনের মাথায় চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩-৪ টাকা। মিলগেটে মিনিকেট চালের বর্তমান মূল্য ৭২-৭৪ টাকা।

মিলারদের যুক্তি: ধানের দাম বাড়ছে
চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জয়নাল আবেদিন, মিয়া ভাই অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী বলেন, “বর্তমানে ধানের বাজারমূল্য মণপ্রতি ১,৯৫০ টাকা, যা আমাদের উৎপাদন খরচের তুলনায় বেশি।”
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী তুলন জানান, যশোর অঞ্চলে মিনিকেট ধান এখনও মণপ্রতি ১,৭৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

বাজার পরিস্থিতি ও ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া
পৌরবাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৭৬ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা মিল থেকে কিনছেন ৭৪ টাকায়।
এক ব্যবসায়ী কামরুল হক বিপ্লব জানান, মিলের নির্ধারিত দামের চেয়ে ক্রয়মূল্য বেশি। তিনি জাফর অটো রাইচ মিল থেকে কিনেছেন ২৫ কেজির বস্তা ১,৮৭৫ টাকায়, যা কেজিতে পড়ে ৭৫ টাকা ২০ পয়সা।

শীর্ষস্থানীয় মিল মালিকদের বক্তব্য
দেশ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ মিনিকেট চাল বিক্রি করছে ৭০ টাকা কেজি দরে। তাদের মালিক সাব্বির খালেক বলেন, “আমরা সংকটকালে কম দামে চাল সরবরাহের চেষ্টা করছি। তবে মুনাফা কম হলেও নির্ধারিত দাম বজায় রাখার চেষ্টা করছি।”
অপরদিকে, রশিদ এগ্রো ফুড প্রডাক্টসের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪-৭৫ টাকায়।

চাল নিয়ে বাজারে অস্বস্তি
স্থানীয় ক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজি ও মাছের দাম কমলেও চালের ঊর্ধ্বমুখী দাম তাদের বাড়তি চাপে ফেলছে। বছরে ৫০ কেজির এক বস্তা চালের দাম বেড়েছে ৫০০ টাকা।

জেলা প্রশাসনের অবস্থান
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, “সব ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামে বিক্রি করছেন না। তবে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।”

সামনের পরিস্থিতি

ব্যবসায়ীরা সতর্ক করছেন, আগামী দুই সপ্তাহে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। ধানের উৎপাদন এবং বাজারে সরবরাহ সংকটের কারণে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

শেয়ার বিজনেস24.কম