বিতরণ করা ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ব্যাংকিং খাতে এমন ঋণের পরিমাণ ও গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। আর এ খেলাপি ঋণের ভারে যেসব ব্যাংক ধীরে ধীরে নুইয়ে পড়ছে এমন তালিকার প্রথম ব্যাংকটি হচ্ছে বিদেশি মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংক পাকিস্তান (এনপিএল)। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৯৪ দশমিক ৭০ শতাংশই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে।
খেলাপি ঋণসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিতরণ করা ঋণের হার বিবেচনায় খেলাপির শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। শীর্ষ ১০ খেলাপির তালিকায় এরপর রয়েছে বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।
এর আগের প্রান্তিকে খেলাপির তালিকায় শেষ অবস্থানে ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। যেখানে তিন মাসের ব্যবধানে একটি ব্যাংকের প্রায় ৯৫ শতাংশ ঋণই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া শীর্ষ দশের সাতটি ব্যাংকই রাষ্ট্রায়ত্ত। যদিও এই প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়েনি; বরং কমেছে।
এসব ব্যাংকে রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ বিতরণ, সুশাসনের অভাব, ব্যবস্থাপকদের যথাযথ ভূমিকা পালন না করা, পরিচালনা পর্ষদের কার্যকর ভূমিকা না থাকার কারণেই এসব ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৫৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বিডিবিএলের ৬৮ দশমিক ২৭, বেসিক ব্যাংকের ৫২ দশমিক ৯৪, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৩ দশমিক ৭৯, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২৭ দশমিক ৫১, সোনালী ব্যাংকের ২৭ দশমিক ৭, অগ্রণী ব্যাংকের ২৫ দশমিক ৬২, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২০ দশমিক ৯৫ ও রূপালী ব্যাংকের ১৮ দশমিক ৭১ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। তবে এর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় জবাবদিহির জায়গা তৈরি না হবে, তত দিন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না। যে ব্যক্তির হাতে ঋণটি বিতরণ হবে তার অবস্থানটাও নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। আর যারা স্বভাবগত খেলাপি, তাদের শাস্তির মুখোমুখি করার একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে। কারণ অনেকে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে টাকা নেন, যা আর ফেরত দেন না। সব মিলিয়ে সুশাসন তৈরি করতে না পারলে এসব ব্যাংকের খেলাপি কমানো সম্ভব হবে না।’
গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৩ হাজার ২৮২ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৫০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
শেয়ার বিজনেস24.কম
























