ঢাকা   মঙ্গলবার ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর সিগন্যাল: আইসিবির হাতে ১ হাজার কোটি টাকার সরকারি তহবিল

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

শেয়ারবাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর সিগন্যাল: আইসিবির হাতে ১ হাজার কোটি টাকার সরকারি তহবিল

শেয়ারবাজারে দীর্ঘ সময়ের পতন পর্বের পর এবার সাফল্যের সূচনা হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে, যা সরাসরি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হবে। এই তহবিলকে বাজার স্থিতিশীলতার বড় ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে তারল্য বাড়ানোর একটি কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আইসিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঋণ পাওয়ার পরই নতুন একটি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ২টার পর থেকে কিছু শেয়ার কেনা শুরু হয়েছে। তিনি জানান, তিন মাসের মধ্যে বিনিয়োগের অগ্রগতি সম্পর্কে সরকারকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনর্গঠনে সহায়তা করবে বলে বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

সরকারি ঋণটি ৫ শতাংশ সুদে ১০ বছরের মেয়াদে দেওয়া হয়েছে এবং শুধুমাত্র শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা যাবে। এটি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে বড় আকারের সরকারি বিনিয়োগ সাধারণত মূল্য বৃদ্ধি এবং স্বাভাবিক চাহিদা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া আইসিবি কোন সেক্টরে আগে বিনিয়োগ শুরু করতে পারে—এ বিষয়েও বাজারে নানা ধরনের ইতিবাচক বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। ব্যাংক, ফার্মা, পাওয়ার ও টেলিকম সেক্টরকে সম্ভাব্য অগ্রাধিকার খাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যদিও আইসিবি ১৩ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিল, তবে প্রথম ধাপে ১ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন মিলেছে। তবে, আগামীতে আরও অনুদান বা ঋণ পাওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রথম ধাপের কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে ভবিষ্যতে আরও ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারের এই উদ্যোগ শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য এক শক্তিশালী প্রথম ধাপ হিসেবে কাজ করবে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে আসছে এবং তারা নতুন সম্ভাবনাময় সুযোগের দিকে উৎসাহ ও আগ্রহের সঙ্গে দৃষ্টি রাখছেন। বিশেষ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে—যা নিকট ভবিষ্যতে লেনদেন ও চাহিদা আরও বাড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী যে, এই পদক্ষেপ বাজারে আস্থা জোরদার করবে এবং মধ্যমেয়াদে শেয়ারবাজারে নতুন চাহিদা ও বিনিয়োগ প্রবাহ তৈরি করবে। বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করলে, তাদের জন্য আরও সুফল অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। তারল্য বাড়ার পাশাপাশি বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের প্রবেশের সম্ভাবনাও বাড়বে বলে তারা মনে করছেন।

যদিও ঋণের পরিমাণ সীমিত, তবুও এটি বাজারে ইতিবাচক ঢেউ সৃষ্টি করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের মনোবল আরও শক্তিশালী করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এর প্রভাব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে এবং শেয়ারবাজারকে নতুন গতিশীলতায় নিয়ে যাবে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের সরকারি তহবিলের উপস্থিতি বাজারে আস্থা পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।